বিপদের মুখে প্রাণী জগৎ! বিষ্ঠা থেকে জন্ম দেবে বিজ্ঞানীরা, বাঁচাবে প্রজাতি?

প্রাণীর মল থেকে জীববৈচিত্র্য রক্ষার এক নতুন দিগন্ত!

বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের চিন্তায় ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা এখন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী প্রজাতিকে রক্ষার জন্য এক অভিনব উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

আর এই গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য হল, প্রাণীর মল (বিশেষ করে তাজা মল) ব্যবহার করে তাদের বিলুপ্তি ঠেকানো যেতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে।

গবেষকরা বলছেন, প্রাণীর মলের মধ্যে তাদের অন্ত্রের আবরণের কোষ থাকে। এই কোষগুলি থেকে ডিএনএ (DNA) সংগ্রহ করা সম্ভব, যা বিশ্লেষণ করে প্রাণীটির জিনগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

এমনকি, এই কোষগুলোকে গবেষণাগারে বৃদ্ধি (culture) করে নতুন প্রাণী তৈরি করাও সম্ভব।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজানাহ উইলিয়ামস-এর নেতৃত্বে একটি দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, ইঁদুর এবং হাতির মল থেকে তাঁরা জীবিত কোষ পৃথক করতে সক্ষম হয়েছেন।

“পুপ জু” নামে পরিচিত এই প্রকল্পের মূল ধারণাটি বেশ সহজ: মলের মধ্যে থাকা কোষ থেকে জেনেটিক উপাদান সংগ্রহ করে সেগুলোকে কাজে লাগানো।

এই পদ্ধতিতে, বিজ্ঞানীরা প্রথমে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে প্রাণীটির জিনগত বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। এর ফলে, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বিদ্যমান জিনগত পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করা যাবে, যা সংরক্ষণে সহায়ক হবে।

তাছাড়া, জীবিত কোষ থেকে উন্নতমানের ডিএনএ পাওয়া যায়। এই ডিএনএ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোর সমাধানে কাজ করতে পারবেন।

শুধু তাই নয়, মলের কোষ থেকে পরীক্ষাগারে শুক্রাণু (sperm) ও ডিম্বাণু (egg) তৈরি করারও সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে, কৃত্রিম প্রজনন কৌশল (যেমন: আইভিএফ) ব্যবহার করে নতুন প্রাণী সৃষ্টি করা যেতে পারে।

এমনকি, ক্লোনিংয়ের (cloning) মাধ্যমেও অবিকল প্রাণী তৈরি করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক “রিভাইভ অ্যান্ড রিস্টোর” (Revive & Restore) নামক একটি সংস্থা এই গবেষণায় অর্থায়ন করছে। এই সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. অ্যাশলি হাচিনসন-এর মতে, “এই পদ্ধতির মাধ্যমে, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে থাকা প্রাণীগুলোর প্রজননক্ষম কোষ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।”

তাঁর মতে, এর ফলে প্রাকৃতিক প্রজনন প্রক্রিয়ার সুবিধাগুলো কাজে লাগানো যাবে এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম প্রজাতি তৈরি করা যেতে পারে।

তবে, এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি সফল করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, মলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া (bacteria) থাকে, যা থেকে কোষগুলোকে আলাদা করা কঠিন। বিজ্ঞানীরা এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন।

এছাড়া, অনেক প্রাণীর প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান এখনো আমাদের হাতে নেই।

কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, প্রজাতি রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হল তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল রক্ষা করা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে, তখন “পুপ জু”-এর মতো নতুন কৌশলগুলো চেষ্টা করা যেতে পারে।

চেস্টার চিড়িয়াখানার গবেষক ড. রিয়ানন বোল্টন বলেন, “আমরা অবশ্যই আবাসস্থল রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় আমাদের বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করতে হবে।”

যদিও এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

এটি বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger) বা সুন্দরবনের (Sundarbans) কুমির সংরক্ষণে এই গবেষণা ভবিষ্যতে সহায়ক হতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *