বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে, শিশুদের হাতে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বাড়ছে, ফলে তাদের অনলাইন জগতে নিরাপদ রাখা অভিভাবকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক সময় দেখা যায়, অভিভাবকরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করলেও, শিশুরা তাদের বুদ্ধি খাটিয়ে সেই বাধাগুলো এড়িয়ে যায়। তাই, শিশুদের অনলাইন জগৎ নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। প্যারেন্টিং কোচ এলিজাবেথ মিলোভিদোভ (Elizabeth Milovidov) বলেন, “অভিভাবকদের সবসময় মনে রাখতে হবে, এটি ভয়ের কিছু নয়, বরং শিশুদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার বিষয়।
শিশুদের অল্প বয়স থেকেই ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, অনলাইনে কোন ধরনের বিষয়গুলো তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।
শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সবার প্রথমে, বাড়ির ওয়াইফাই রাউটারে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এর মাধ্যমে ক্ষতিকর ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করা সম্ভব।
এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং গেমের সেটিংসে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, শুধুমাত্র প্রযুক্তি নির্ভর না হয়ে, শিশুদের সাথে নিয়মিত কথা বলাটা জরুরি। তাদের অনলাইন কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া এবং কোনো সমস্যা হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ১০০% নির্ভরযোগ্য নয়। শিশুরা যথেষ্ট চালাক হলে, তারা সেটি এড়িয়ে যেতে পারে। তাই, তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তাদের বোঝানো খুব জরুরি।
শিশুদের ডিজিটাল জগতে নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের নিজেদেরও ভালো উদাহরণ তৈরি করতে হবে। তারা যদি সবসময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তবে শিশুরা সেই আচরণ অনুসরণ করার সম্ভাবনা বেশি।
তাই, অভিভাবকদের উচিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া এবং শিশুদের সামনে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
এছাড়াও, শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে, তাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারা ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, ঘুমাচ্ছে কিনা, পড়াশোনায় ভালো ফল করছে কিনা এবং বন্ধুদের সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন, এসব বিষয়ও নজরে রাখতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে শিশুদের সাথে আলোচনা করা বেশি জরুরি। তাদের কথা শোনা এবং তাদের বোঝানো প্রয়োজন।
শিশুরা যদি কোনো নিয়ম ভাঙে, তাহলে তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত। কেন তারা নিয়ম ভাঙছে, সেটি জানার চেষ্টা করতে হবে। তাদের ভুলগুলো বুঝিয়ে, তাদের ডিজিটাল জগতে দায়িত্বশীল হতে শেখাতে হবে।
শিশুদের জন্য খেলাধুলা এবং সামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বাইরের জগতে আরও বেশি সময় কাটানোর জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
পরিশেষে, শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের সচেতনতা, খোলামেলা আলোচনা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং তাদের ভালো বন্ধু হয়ে ওঠা অভিভাবকদের দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: The Guardian