এআই নার্স: হাসপাতালের সেবায় নতুনের পথে, পুরনোদের কপালে চিন্তার ভাঁজ!

চিকিৎসা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বাড়ছে দ্রুতগতিতে, যা স্বাস্থ্যসেবার ধরন পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, হাসপাতালগুলো এখন রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করা থেকে শুরু করে জরুরি অবস্থা শনাক্ত করতে এআই নির্ভর প্রোগ্রাম ব্যবহার করছে।

এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের চাপ কমাতে সহায়ক হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্যখাতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এআই-এর প্রধান সুবিধা হলো, এটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা রোগীদের জন্য উপলব্ধ থাকতে পারে। বর্তমানে অনেক হাসপাতালে ‘আনা’র মতো এআই প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হচ্ছে, যা রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়।

হিন্দি থেকে হাইতিয়ান ক্রেওল পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় এই প্রোগ্রামগুলো সেবা দিতে সক্ষম। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় বাঁচে, যা তারা রোগীদের সরাসরি পর্যবেক্ষণে ব্যয় করতে পারেন।

কিন্তু নার্সিং ইউনিয়নগুলোর আশঙ্কা, এআইয়ের এই আগ্রাসন মানুষের তৈরি করা অভিজ্ঞতাকে খাটো করে দিচ্ছে এবং রোগীদের প্রাপ্য সেবার মান কমিয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, এই প্রযুক্তি এখনও ভালোভাবে বোঝা যায় না এবং এর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করা হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, নেভাদার একটি হাসপাতালের ঘটনা উল্লেখ করা যায়, যেখানে এআই সিস্টেম সেপসিস (রক্তে সংক্রমণ) শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসার নির্দেশ দেয়, কিন্তু কর্তব্যরত নার্স রোগীর কিডনি বিকল হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে ভিন্ন চিকিৎসার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের হস্তক্ষেপে সঠিক চিকিৎসা সম্ভব হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল নার্সেস ইউনাইটেড-এর মতো সংগঠনগুলো এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে নার্সদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। তারা মনে করে, এআইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে কোনো ভুল হলে, তার দায় নার্সদের ওপর বর্তানো উচিত নয়।

তাদের আশঙ্কা, হাসপাতালগুলো ধীরে ধীরে মানুষের পরিবর্তে এআই নির্ভর হয়ে উঠছে, যা স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা হ্রাস করবে।

অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এআই প্রযুক্তি নার্সদের কাজ সহজ করে তাদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এক লাখের বেশি নার্স চাকরি ছেড়েছেন, যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মী সংকট।

এই পরিস্থিতিতে এআই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যখাতে কর্মী ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে।

তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআইয়ের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি সবসময় রোগীর শারীরিক ভাষা বা অনুভূতির সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝতে পারে না, যা একজন অভিজ্ঞ নার্স সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন।

এছাড়া, এআইয়ের তথ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অনেক সময় ভুল চিকিৎসার কারণ হতে পারে।

চিকিৎসা খাতে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে, প্রযুক্তিকে মানুষের বিকল্প হিসেবে নয়, বরং স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

রোগীদের উন্নত সেবা প্রদানের জন্য এআই এবং মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বর্তমানে, কুইন্টাস (Qventus) এর মতো কিছু কোম্পানি এআই নির্ভর প্রোগ্রাম তৈরি করছে, যা হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজ সহজ করে তোলে। এই প্রোগ্রামগুলো রোগীদের ফোন করে পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য দেয় এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কাগজপত্র তৈরি করতে সাহায্য করে।

ইসরায়েলি স্টার্টআপ কোম্পানি ‘Xoltar’ রোগীদের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলার জন্য এআই অবতার তৈরি করেছে, যা রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে থাকে।

এআই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেও, এর ব্যবহার হতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, সেখানে এআইয়ের প্রয়োগের আগে এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই বিবেচনা করতে হবে।

প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানবীয় স্পর্শ ও অভিজ্ঞতার গুরুত্ব সব সময় বজায় রাখতে হবে, যাতে রোগীদের নিরাপত্তা ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *