ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবিরাম’ হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণার মধ্যে বিদ্রোহীরা প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে। শনিবারের মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হওয়ার পর হুতি কর্তৃপক্ষ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
খবর: আল জাজিরা।
রবিবার হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরো এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। হুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল-আসবাহি জানিয়েছেন, শনিবারের হামলায় রাজধানী সানাসহ সাদা, আল-বায়দা এবং রাদা অঞ্চলে আঘাত হানা হয়, যাতে কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং ১০১ জন আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ‘অধিকাংশই শিশু ও নারী’ উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে জাহাজে হুতিদের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ‘ব্যাপক প্রাণঘাতী শক্তি’ ব্যবহার করবেন।
২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানিয়ে হুতিরা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা শুরু করে। রবিবার এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘গাজার অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এবং সেখানে ত্রাণ প্রবেশ করতে না দেওয়া পর্যন্ত নৌ অভিযান চলবে।’
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হুতিরা তাদের আক্রমণ স্থগিত রেখেছিল। এরপর গত দুই মাসে কোনো হামলা হয়নি।
মার্চ মাসের শুরুতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করা হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল হামাসকে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে রাজি করানো।
মঙ্গলবার, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি হুতিদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পর তারা পুনরায় হামলার ঘোষণা করে।
রবিবার সকালে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের বিরুদ্ধে ‘অবিরাম’ হামলা চালাবে যতক্ষণ না তারা মার্কিন সম্পদ এবং আন্তর্জাতিক নৌ-পরিবহনের ওপর হামলা বন্ধ করে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হেগসেথ বলেন, হুতিরা ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে জাহাজে যে অসংখ্য হামলা চালিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে ইরানকে সতর্ক করা হচ্ছে, যাতে তারা হুতিদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে।
হেগসেথ আরও বলেন, ‘তোমরা যখন জাহাজ লক্ষ্য করে গুলি করা বন্ধ করবে, সম্পদ ধ্বংস করা বন্ধ করবে, তখনই এটা বন্ধ হবে।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বেশ কয়েকবার ইয়েমেনে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধ এবং হুতিদের নৌ-অভিযান তখনও অব্যাহত ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আরও ঘোষণা করেছেন যে, হুতিরা জাহাজগুলোতে হামলা করা বন্ধ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান চলবে। তিনি ইরানের ওপর হুতিদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ করেন।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টস এবিসি নিউজকে বলেছেন, এসব হামলায় ‘আসলে একাধিক হুতি নেতাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং তাদের নির্মূল করা হয়েছে’। তবে, ওয়াল্টসের এই মন্তব্যের বিষয়ে হুতিদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক নাবিল খৌরি আল জাজিরাকে বলেছেন, হুতিদের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের ‘ভুল পদক্ষেপ’। অতীতে হুতিদের ‘পুরো অঞ্চলে মারাত্মকভাবে বোমা হামলা’ করা হয়েছে, যা তাদের দমন করতে পারেনি।
খৌরি আরও বলেন, নৌ-পরিবহনে হামলা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
ট্রাম্প যখন ইরানকে হুতিদের সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানান এবং এই গোষ্ঠীর কাজের জন্য তেহরানকে ‘সম্পূর্ণভাবে দায়ী’ করার অঙ্গীকার করেন, তখন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান জেনারেল হোসেন সালামি তার দেশের হুতিদের হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, সালামি রবিবার বলেছেন, ইরান এই অঞ্চলের গোষ্ঠীগুলোর ‘জাতীয় বা পরিচালন নীতি নির্ধারণে কোনো ভূমিকা রাখে না’। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওয়াশিংটন ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করতে পারে না।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা