ইসরায়েলের শিন বেট প্রধানকে সরানোর ঘোষণা, নেতানিয়াহুর চাঞ্চল্য!

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। রবিবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শিন বেটের প্রধান রোনেন বার-এর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘দীর্ঘদিনের অনাস্থা’ রয়েছে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধানের ওপর আস্থা রাখাটা জরুরি।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আগামী বুধবার মন্ত্রিসভার এক বিশেষ বৈঠকে শিন বেট প্রধানকে বরখাস্তের প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও রোনেন বার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় তিনি নিচ্ছেন, তবে তার মতে, তাকে সরানোর আসল উদ্দেশ্য এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।

বার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আনুগত্যের প্রত্যাশা জনস্বার্থের পরিপন্থী এবং তা সম্পূর্ণভাবে অনুচিত।

ইসরায়েলি ডেমোক্রেট পার্টির প্রধান ইয়ার গোলানও বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, নেতানিয়াহু কার্যত ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

গোলান আরও অভিযোগ করেন, শিন বেট প্রধানকে বরখাস্ত করার এই চেষ্টা একজন দুর্নীতিগ্রস্ত আসামীর, যিনি ইসরায়েলের প্রতি অনুগত এবং নেতানিয়াহু ও তার ঘনিষ্ঠদের গুরুতর অপরাধের তদন্ত করছেন। তিনি তাদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে রাজি নন বলেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গোলান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শিন বেট প্রধানকে বরখাস্তের বিষয়টি এত সহজে হতে দেওয়া হবে না। এর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ করা হবে এবং নেতানিয়াহুকে ইসরায়েলকে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির একনায়কতন্ত্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল, তার দায় কার—এ নিয়ে নেতানিয়াহু ও বার-এর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। শিন বেট, যা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে, সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে হামলার ব্যর্থতার জন্য নিজেদের দায় স্বীকার করেছে।

ইসরায়েলে এই ঘটনাকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়, যেখানে ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং ২৫১ জনকে বন্দী করা হয়। তবে, সংস্থাটি নেতানিয়াহুকেও ব্যর্থ সরকারি নীতির জন্য দায়ী করেছে, যা এই হামলার কারণ হয়েছে।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহু ৭ অক্টোবরের ঘটনার বিষয়ে সরকারি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এছাড়া, হামাস হামলার সময় দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শীর্ষ ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে পদত্যাগ করতে হয়েছে, যাদের মধ্যে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি উল্লেখযোগ্য।

সম্প্রতি, বার-এর পূর্বসূরি নাদাভ আর্গামান এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি জানান, নেতানিয়াহু যদি আইন ভেঙে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হবে। এর পরই নেতানিয়াহু আর্গামানের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *