যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই শতাধিক ভেনেজুয়েলীয় অভিবাসীকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত এই বহিষ্কার আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, তবুও তা কার্যকর করা হয়েছে।
বিতর্কিত এই পদক্ষেপের কারণে ভেনেজুয়েলার সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুদ্ধকালীন ব্যবহারের জন্য তৈরি একটি আইনের আশ্রয় নিয়ে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এই নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত অভিবাসীরা ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামের একটি গ্যাংয়ের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইয়িব বুকেলে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাদের হেফাজতে নিতে রাজি হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বহিষ্কারের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিলেও, বিমানের যাত্রা ততক্ষণে সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। ভেনেজুয়েলার সরকার ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে তাদের নাগরিকদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তারা বলেছে, এই কাজ মার্কিন ও আন্তর্জাতিক আইন উভয়েরই লঙ্ঘন।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট বুকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদালতের রায় নিয়ে মজা করে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, তাদের সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রে (CECOT) এই গ্যাং সদস্যদের রাখা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য এল সালভাদরকে সামান্য কিছু অর্থ পরিশোধ করবে।
ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প দেশের জনগণকে জরুরি হুমকি থেকে রক্ষা করতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহার করছেন।
বুকেলে জানান, ফেরত পাঠানো গ্যাং সদস্যদের মধ্যে প্রথম দফায় ২৩৮ জনকে সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের এক বছর পর্যন্ত সেখানে রাখা হতে পারে, যা পরে বাড়ানোও সম্ভব।
সেখানকার বন্দীদের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাদের হাতকড়া পরানো এবং মাথার চুল ন্যাড়া করা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এল সালভাদরে বুকেলের কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী নীতির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার এই কার্যক্রমের সমালোচনা করে থাকে।
বুকেলের এই প্রস্তাব নিয়ে এল সালভাদরের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, এর ফলে দেশে অপরাধ দমনে সহায়তা মিলবে, আবার কারো কারো মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিতাড়িতদের মধ্যে কুখ্যাত এমএস-১৩ গ্যাংয়ের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও রয়েছেন।
ট্রাম্পের আদেশে বলা হয়েছে, ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম সরাসরি অথবা মাদুরো সরকারের মদদে পরিচালিত হচ্ছে।
এই গ্যাংয়ের ১৪ বছরের বেশি বয়সী কোনো সদস্য যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন, তবে তাদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়িত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) এবং ডেমোক্রেসি ফরোয়ার্ড নামের একটি সংগঠন আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিল, যাতে এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়।
তাদের যুক্তি ছিল, ১৭৯৮ সালের আইনটি শান্তির সময়ে ব্যবহারের জন্য নয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা