ভিসা কেড়ে নিয়ে কলম্বিয়ার ছাত্রীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করলো কে? তোলপাড়!

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর দাবি, তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ-সংক্রান্ত কোনো বিক্ষোভে অংশ নেননি, বরং মুক্তভাবে মত প্রকাশের অধিকার চর্চা করার কারণেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

**রঞ্জনি শ্রীনিবাসনের অভিজ্ঞতা**

রঞ্জনি শ্রীনিবাসন নামের ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি ভারতে। তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এসেছিলেন এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তাতে তিনি কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না।

এমনকি বিক্ষোভের সমর্থনে কোনো সমাবেশেও যাননি তিনি। রঞ্জনী জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি কেবল গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে কিছু পোস্ট শেয়ার করেছিলেন এবং একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছিল।

রঞ্জনি শ্রীনিবাসনের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং এরপর তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ভিসা বাতিলের কোনো নির্দিষ্ট কারণও জানানো হয়নি।

রঞ্জনি মনে করেন, তাঁর ওপর এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কারণ তিনি মুক্তভাবে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন।

**যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পদক্ষেপ**

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) রঞ্জনি শ্রীনিবাসনকে চিহ্নিত করেছে, যারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রতিবাদে অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই রঞ্জনীর ভিসা বাতিল করা হয়।

ডিএইচএস-এর সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক টুইট বার্তায় দাবি করেছেন, রঞ্জনি স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়েছেন। তবে রঞ্জনীর আইনজীবীরা এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন।

**আটক ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট**

রঞ্জনীর ঘটনার সাথে মিল রয়েছে মাহমুদ খলিল নামের আরেক ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্টের। মাহমুদ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং তিনিও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে জড়িত ছিলেন।

বর্তমানে তিনি অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর গ্রিন কার্ড বাতিল করার পরেই তাঁকে আটক করা হয়।

**আইনজীবীদের বক্তব্য**

রঞ্জনী শ্রীনিবাসনের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অভিবাসন কর্মকর্তারা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে হয়রানি করেছেন। তাঁরা আরও জানান, রঞ্জনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।

**শিক্ষার্থীদের অধিকার ও উদ্বেগের বিষয়**

যুক্তরাষ্ট্রে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্তভাবে মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত। রঞ্জনীর ঘটনা সেই অধিকারের প্রতি আঘাত এবং এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাঁদের পড়াশোনা এবং ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *