জাপানের নিসেকো: তুষারের স্বর্গরাজ্য, যেখানে বাড়ছে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা
হিমাচল প্রদেশের কোলে অবস্থিত জাপানের নিসেকো শহরটি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে স্কিইং প্রেমীদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানকার বরফের গুণমান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একে ‘এশিয়ার তুষার রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত করেছে। শীতকালে যখন অন্যান্য অনেক স্কি রিসোর্টে তুষারপাতের অভাব দেখা যায়, তখন নিসেকোতে যেন তুষারের উৎসব চলে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির দুর্বল দশার কারণে অনেক স্কি রিসোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ১৯৯০-এর দশকের অর্থনৈতিক উন্নতির সময়েও স্থানীয় স্কিয়ার ও স্নোবোর্ডারদের সংখ্যা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। তবে নিসেকোর চিত্রটা ভিন্ন। এখানে ক্রমাগত বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটছে, সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট। এই শহরে শীতের সময় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
নিসেকোর এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো এখানকার তুষারের গুণগত মান। এখানকার হালকা, শুকনো বরফ স্কিইং এবং স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য আদর্শ। এখানকার ইয়োতেই পর্বতকে (Mount Yotei) স্থানীয়রা ‘তুষার ধারণকারী’ হিসেবে মনে করে, যা প্রচুর পরিমাণে তুষার উৎপাদনে সহায়ক। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, লা নিনার কারণে এখানকার আবহাওয়া স্কিইংয়ের জন্য আরও উপযুক্ত হয়ে উঠেছে।
পর্যটকদের মধ্যে অস্ট্রেলীয়দের আধিপত্য কমে গেলেও, অন্যান্য দেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এখানকার বিলাসবহুল হোটেল, যেমন সেতসু নিসেকো, বিশ্বজুড়ে তাদের সুনাম অর্জন করেছে। এখানে মিচেলিন-স্টার শেফদের তৈরি খাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। হেলিকপ্টার যোগে স্কি করার মতো বিশেষ আকর্ষণও এখানে বিদ্যমান।
নিসেকো একসময় ‘প্রাচ্যের ভ্যাল’ বা ‘জাপানের সেন্ট মরitz’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এটি নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করেছে। এখানকার একটি প্রধান আকর্ষণ হলো ‘নিসেকো ইউনাইটেড’ – যেখানে চারটি রিসোর্ট (আননাপুরানা, নিসেকো ভিলেজ, হিরাফু এবং হানাজোনো) একসাথে স্কি করার সুযোগ করে দেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুষারপাতের পরিমাণে পরিবর্তন আসলেও, এখানকার ব্যবসায়ীরা মনে করেন পর্যটকদের আগমন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। নিসেকো ট্যুরিজম প্রমোশনের জেনারেল ম্যানেজার সাতোশি নাগাই বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ, তবে আমরা বিশ্বাস করি, পর্যটকরা এখানে আসতেই থাকবে।”
নিসেকোর এই সাফল্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। বাংলাদেশেও শীতকালে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটকদের আকর্ষণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নত অবকাঠামো, গুণগত মানসম্পন্ন পরিষেবা এবং বিভিন্ন আকর্ষণ তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পেও বিদেশি বিনিয়োগ ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন