ইতালির গণতন্ত্রে ভাঙন? চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে ইউরোপজুড়ে বিতর্ক!

ইউরোপে গণতন্ত্রের অবক্ষয়: ইতালিসহ পাঁচটি দেশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউরোপে গণতন্ত্রের দুর্বল অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

‘সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ফর ইউরোপ’ (Liberties) নামক একটি সংস্থার এই প্রতিবেদনে ইতালিসহ পাঁচটি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল করতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। প্রতিবেদনটিতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করা এবং মত প্রকাশের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে গণতন্ত্রের সংকট তৈরি কারী দেশ হিসেবে ইতালি, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই দেশগুলোতে আইনের শাসনকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে ইতালিতে বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন কিছু প্রস্তাব আনা হয়েছে, যার মাধ্যমে বিচার মন্ত্রকের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি কৌঁসুলিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে। এছাড়া, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণেরও অভিযোগ উঠেছে, যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখকের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ভাষণ বাতিল করা হয়েছে এবং একটি টক শো হোস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বুলগেরিয়ায় দুর্নীতি বিরোধী তদন্তের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্লোভাকিয়ায় কেন্দ্রীয় কৌঁসুলি অফিসের বিলুপ্তি এবং এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের চেষ্টা চলছে, যা আন্তর্জাতিক অনুদান গ্রহণকারী সংস্থাগুলোকে ‘বিদেশি মদদপুষ্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করবে।

ক্রোয়েশিয়ার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত একজন বিচারককে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শুধু এই দেশগুলোই নয়, ফ্রান্স এবং জার্মানির মতো উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ফ্রান্সে আইন প্রণয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশেষ একটি পদ্ধতির (ধারা ৪৯.৩) ব্যাপক ব্যবহার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনা ঘটেছে।

জার্মানিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনপন্থীদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদনে পোল্যান্ডের উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আঘাতের প্রতিক্রিয়া এখনো দৃশ্যমান। যদিও বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, তবে এতে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, কোনো দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে গেলে, তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন এবং এতে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।

প্রতিবেদনটি ইউরোপীয় কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন আইনের শাসনের লঙ্ঘনগুলো কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং এর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল বিতরণের সম্পর্ক স্থাপন করে।

এছাড়াও, আইনের শাসনের অবমূল্যায়নকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *