পাকিস্তানের সিন্ধু নদীর অববাহিকা : লবণাক্ততার আগ্রাসনে বিলীন হচ্ছে জনপদ, বাড়ছে উদ্বাস্তু সমস্যা।
পাকিস্তানের সিন্ধু নদীর অববাহিকা অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। একদিকে যেমন সমুদ্রের লবণাক্ততা গ্রাস করছে জনপদ, অন্যদিকে সেচের জন্য খাল খননের ফলে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এতে বাস্তুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
সিন্ধু নদীর মোহনার কাছে অবস্থিত থাট্টা জেলার একটি জনপদ হলো খারোchan। এখানকার মানুষ একসময় কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
কিন্তু নদীর পানি কমে যাওয়ায় এবং সমুদ্রের জল ক্রমাগত লোকালয়ে প্রবেশ করায় তাদের জমিগুলো লবণাক্ত হয়ে গেছে। ফলে, এখানকার বাসিন্দারা বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খারোchan-এর জনসংখ্যা ১৯৮৮ সালের ২৬,০০০ থেকে ২০২৩ সালে ১১,৪03-এ এসে দাঁড়িয়েছে।
শুধু খারোchan নয়, গত এক দশকে সিন্ধু অববাহিকার বহু গ্রাম সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানকার মানুষ তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
জীবিকার সন্ধানে তারা হয় শহরমুখী হচ্ছে, না হয় অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তান সরকার ‘সবুজ পাকিস্তান উদ্যোগ’-এর অংশ হিসেবে সেচের জন্য নতুন খাল খননের পরিকল্পনা করছে।
এজন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও বাহরাইন থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ লক্ষ হেক্টর অনুর্বর জমিকে চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
সিন্ধু ও শতদ্রু নদী থেকে এই খালগুলোতে পানি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করছেন সিন্ধুর স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এতে করে সিন্ধু প্রদেশের জন্য পানির সংকট আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্ধু নদীর অববাহিকার এই সংকট নতুন নয়।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে এখানে বাঁধ ও খাল নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়।
স্বাধীনতার পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল।
এর ফলস্বরূপ, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম এই বদ্বীপ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এক সময়ের উর্বর ভূমি আজ লবণাক্ততার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৮৩৩ সালে সিন্ধু বদ্বীপের আয়তন ছিল প্রায় ১৩,৯০০ বর্গকিলোমিটার।
কিন্তু ২০১৮ সালে তা কমে ১,০৬৭ বর্গ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।
অর্থাৎ, বদ্বীপটি তার আগের আকারের ৯২ শতাংশ হারিয়ে ফেলেছে।
বর্তমানে সেখানকার মানুষের প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাছ ধরা।
কিন্তু নদীর পানি দূষিত হওয়ায় এবং অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে মৎস্যসম্পদও হ্রাস পাচ্ছে।
একসময় যেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, এখন সেখানে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্ধু অববাহিকার এই সংকট নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ।
বিদ্যমান সেচ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই অঞ্চলের পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
একইসঙ্গে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে লবণাক্ততার আগ্রাসন বন্ধ করা যায় এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা