চীনের কণ্ঠরোধ করতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে উল্লাস, উদ্বিগ্ন বিশ্ব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) এবং রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে উল্লাস প্রকাশ করেছে চীন। এই পদক্ষেপকে তারা নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই মিডিয়া সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র, ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ ভিওএকে ‘মিথ্যা কারখানা’ হিসেবে অভিহিত করে এর কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করে, চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিনজিয়াং অঞ্চলের পরিস্থিতি, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিতর্ক, তাইওয়ান, হংকং, করোনাভাইরাস মহামারী এবং চীনের অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয়ে ভিওএ ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেছে।
১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বিক্ষোভের সময় ভিওএ চীনা ভাষায় খবর প্রচার করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
অন্যদিকে, আরএফএ, যা ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, চীন, উইঘুর এবং তিব্বতি ভাষায় খবর প্রচার করে থাকে। এই সংস্থাটি চীনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিল।
আরএফএ কর্তৃপক্ষের মতে, মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্বৈরাচারী শাসকদের পুরস্কৃত করার শামিল।
চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ভিওএ এবং আরএফএ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
তাঁদের মতে, এই সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল। কেউ কেউ ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভিওএ এবং আরএফএ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক সংবাদ জগতে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে। চীন বর্তমানে তাদের নিজস্ব গণমাধ্যমের প্রসার ঘটাচ্ছে।
তারা বিশ্বজুড়ে তাদের কণ্ঠস্বর আরো জোরালো করতে চাইছে। ২০১৮ সালে, চীন আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য তিনটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে একত্রিত করে ‘ভয়েস অফ চায়না’ নামে একটি বিশাল মিডিয়া সংস্থা তৈরি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, একদিকে যখন ভিওএ-এর মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী মিডিয়া সংস্থাগুলো দুর্বল হচ্ছে, তখন চীন তাদের নিজস্ব প্রচারণার বিস্তার ঘটাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের কারণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন