রমজানের সময়: এক প্রান্তে সেহরি, অন্য প্রান্তে ইফতার!

রমজান মাস, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পবিত্র মাস, সারা বিশ্বে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই সময়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা রাখেন, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম।

সময় ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন সেহরির প্রস্তুতি চলে, ঠিক তখনই অন্য প্রান্তে ইফতারের আয়োজন শুরু হয়। এটি যেন বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের একতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যখন ভোর হয়, ফজরের নামাজের আজান শোনা যায়, ঠিক সেই মুহূর্তে, আটলান্টিক পাড়ের কোনো শহরে হয়তো সূর্যাস্তের ঘণ্টা বাজছে। আমাদের দেশের মানুষজন যখন সেহরির জন্য প্রস্তুত হন, কেউ হয়তো ডিম পরোটা খাচ্ছেন, আবার কারো টেবিলে থাকে সুস্বাদু সবজি বা রুটি, তখন অন্য কোনো দেশের মুসলিমরা তাদের দিনের উপবাস ভাঙার জন্য ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই দৃশ্যটি রমজানের বৈশ্বিক রূপকে তুলে ধরে, যেখানে সময় ও ভৌগোলিক ভিন্নতা সত্ত্বেও সবাই একই আত্মত্যাগে ব্রতী হন।

আসুন, কয়েকটি শহরের উদাহরণ দেখা যাক। ব্রাজিলের রেসিফে যখন সেহরির সময় হয়, তখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ইফতারের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

কানাডার উইনিপেগ-এ যখন রোজার সূচনা হয়, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় তখন ইফতারের প্রস্তুতি চলে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে সেহরির সময়, ভারতের মুম্বাইয়ে ইফতারের ঘণ্টা বাজে।

আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কস-এ যখন ভোর হয়, পাকিস্তানের করাচিতে তখন ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসে। রাশিয়ার আনadyর-এ যখন সেহরির প্রস্তুতি চলে, ফিলিস্তিনের গাজায় তখন ইফতারের জন্য অপেক্ষা করা হয়।

আমেরিকান সামোয়ার পাগো পাগো-তে যখন সেহরির সময়, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তখন ইফতারের আয়োজন শুরু হয়। টোঙ্গার নুকুয়ালোফা-তে সেহরির সময়, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ইফতারের প্রস্তুতি চলে।

নিউ ক্যালিডোনিয়ার নুমেয়া-তে যখন সেহরি, নাইজেরিয়ার আবুজাতে তখন ইফতারের সময়। সবশেষে, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে সেহরির সময় হলে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়।

রমজান মাসে রোজার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্য প্রকাশ করি। এই সময়ে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, দান-খয়রাত ও ভালো কাজের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।

রোজা মানুষকে তাকওয়া অর্জনে সাহায্য করে, যা হলো আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর প্রতি অনুগত থাকা এবং সংযমী হওয়া। রমজান মাস তাই শুধু উপবাসের সময় নয়, বরং এটি ত্যাগ, তিতিক্ষা ও ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

রমজান আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে এক গভীর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান।

তাই আসুন, আমরা সবাই এই পবিত্র মাসে বেশি বেশি করে ইবাদত করি এবং সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হই।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *