ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। গত কয়েকদিনে উভয় পক্ষের মধ্যে সামরিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বিশেষ করে, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিদের হামলা এবং এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। এতে নারী ও শিশুসহ বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
হুতি বিদ্রোহীরাও এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং তারা মার্কিন যুদ্ধজাহাজে হামলার দাবি করেছে। এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে।
হুতি বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়েমেনের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানানো।
তাদের দাবি, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় তারা লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। হুতিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত তাদের এই অভিযান চলবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হুতিদের পেছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে।
যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরান হুতিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছে, যার ফলস্বরূপ লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটছে।
এই সংঘাতের কারণে লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ দিয়ে জাহাজ চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লোহিত সাগর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বাণিজ্য পথ, যা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে পণ্য পরিবহনের প্রধান রুট।
হুতিদের হামলার কারণে অনেক জাহাজকে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল পথে চলাচল করতে হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি, বিভিন্ন পণ্যের দামও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে।
যুক্তরাষ্ট্র ও হুতিদের এই সংঘাতের ফলে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই দেশটির মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়।
সংঘাতের কারণে খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এই সংকট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছে।
বর্তমানে, পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, সহজে এর সমাধান দৃশ্যমান হচ্ছে না। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা