বন্ধুদের সাথে অল্প হাঁটা: হাইকিংয়ের মজাই আলাদা!

ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে দূরের পথ হাঁটার আনন্দ

সকালবেলা, হালকা কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যের আলো ফুটতেই মনটা কেমন শান্ত হয়ে যায়। ঢাকার কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে দূরে, প্রকৃতির কাছাকাছি হেঁটে বেড়ানোর সুযোগ পেলে কার না ভালো লাগে?

যারা নিয়মিত হাঁটাচলার অভ্যাস করেন, তাদের জন্য দূরে কোথাও হেঁটে আসাটা নতুন কিছু নয়। তবে, একসঙ্গে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার পরিবর্তে যদি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে হাঁটা যায়, তাহলে কেমন হয়?

যুক্তরাজ্যের একটি পত্রিকার নিবন্ধে লেখক জানিয়েছেন, তিনি এবং তার বন্ধু মিলে প্রায় চার বছর ধরে একটি দীর্ঘ পথ—যেটি প্রায় ১৮৫ মাইল লম্বা, সেটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে হেঁটেছেন। পুরো পথটি একসঙ্গে হাঁটার বদলে, তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কয়েক দিন পর পর অল্প কিছু পথ পাড়ি দেন।

এর ফলে একসঙ্গে অনেক দিন ছুটি কাটানোর প্রয়োজন হয় না, অথবা ভারী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে থাকারও কোনো ঝামেলা থাকে না। এছাড়া, একসঙ্গে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করতে গিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে মতের অমিল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, যা এক্ষেত্রে নেই।

এই ধরনের ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে হাঁটার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। লেখকের মতে, এতে ভ্রমণের জন্য হয়তো বেশি সময় ব্যয় করতে হয়, কিন্তু অন্যান্য অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

যেমন, কাজের চাপ বা পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে যারা একসঙ্গে বেশি দিন সময় দিতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ উপায়।

উদাহরণস্বরূপ, লেখক বলেছেন, তিনি এবং তার বন্ধু তাদের হাঁটা পথের আগের স্থান থেকে যাত্রা শুরু করার জন্য বাস, মেট্রো এবং ট্রেনের মতো গণপরিবহন ব্যবহার করেন। এতে হয়তো কিছুটা সময় বেশি লাগে, তবে প্রকৃতির কাছাকাছি হেঁটে বেড়ানোর আনন্দটাই এক্ষেত্রে আসল।

এভাবে হাঁটার ফলে প্রকৃতির পরিবর্তনগুলোও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। লেখকের মতে, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির যে রূপান্তর, তা একসঙ্গে অনেক দিনের জন্য হাঁটা পথে হয়তো সেভাবে উপভোগ করা যেত না।

এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য এবং বন্যজীবন দেখা যায়, যা এই পদ্ধতিতে হাঁটার সময় বিশেষভাবে অনুভব করা যায়।

ছোট ছোট অংশে পথ হাঁটার ফলে সম্পর্কগুলোও আরও দৃঢ় হয়। লেখক এবং তার বন্ধু তাদের হাঁটার দিনগুলোতে একসঙ্গে সময় কাটান, যা তাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও মজবুত করে তোলে।

হাঁটার সময় তারা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা প্রতিদিন ৭,৫০০-এর বেশি পদক্ষেপ ফেলেন, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হাঁটেন, তাদের গড় আয়ুও বৃদ্ধি পায়।

যুক্তরাজ্যে এই ধরনের পথ অনেক রয়েছে, যেখানে মানুষজন ছোট ছোট অংশে হেঁটে প্রকৃতির আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। বাংলাদেশেও এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে মানুষজন দলবদ্ধভাবে বা একা হেঁটে বেড়াতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, সুন্দরবনের আশেপাশে হেঁটে বেড়ানো, অথবা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হেঁটে সূর্যাস্ত উপভোগ করার মতো অভিজ্ঞতাগুলোও এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সুতরাং, যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে দূরের পথ হাঁটা একটি চমৎকার উপায় হতে পারে। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, এবং একই সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *