৬০ বছরেও স্বপ্নপূরণ! ময়লার স্তূপ থেকে মুক্তি, উদ্যোক্তা এরিকের নতুন গল্প

৬০ বছর বয়সের পরেও নতুন উদ্যম: আবর্জনা সমস্যার সমাধানে সফল এক ব্যবসায়ীর গল্প

ম্যানচেস্টার, যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা এরিক ম্যাকবিন, বয়স ষাটের কোঠায় পৌঁছেও নতুন করে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তার এই নতুন যাত্রার পেছনে ছিল একটি সাধারণ, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা—বাসস্থানের ময়লার স্তূপ।

বহুতল ভবনের ১৯ তলার বাসিন্দা এরিক প্রায়ই দেখতেন, শুক্রবার সকালে পরিচ্ছন্ন হওয়া ডাস্টবিনগুলো রবিবার দুপুরের মধ্যেই উপচে পড়ছে। বাইরের লোকজন এসেও সেখানে ময়লা ফেলে যেত।

এরিক জানান, “ভবনের ভেতরের পরিবেশ বেশ সুন্দর ছিল, শুধু ডাস্টবিনগুলো ছাড়া। এমন একটা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আমি একটা উপায় খুঁজছিলাম।” তিনি যে হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনে কাজ করতেন, সেখানকার প্রধানও ছিলেন তার বস।

এরিক ছিলেন উদ্ভাবন ও নতুন আইডিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান। তিনি এই সমস্যার সমাধানে কাজ করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে তিনি একটি মোবাইল কম্প্যাক্টিং পরিষেবা চালু করেন, যা বেশ কার্যকর ছিল।

কিন্তু কিছু বছর পর, পুনর্গঠনের কারণে তার চাকরি চলে যায়।

চাকরি হারানোর পর এরিকের মনে হয়েছিল, যেন সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল, হয়তো আমি পারব না।

কিন্তু নিজের ব্যবসা করার ব্যাপারে আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।” তিনি তার সামান্য কিছু ব্যক্তিগত সঞ্চয় এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে ৬০ বছর বয়সে একটি বিশেষ যান ও যন্ত্রপাতি কিনে ফেলেন।

এর মাধ্যমে তিনি ‘সকোশ’ নামে একটি আবর্জনা সংক্ষেপণকারী পরিষেবা চালু করেন। এরিক বলেন, “আমরা ডাস্টবিনের আবর্জনাগুলোকে সংকুচিত করি, ফলে জায়গা বাঁচে।”

অনেকের কাছে হয়তো নতুন চাকরি খোঁজাটা সহজ মনে হতো। কিন্তু এরিকের ছোটবেলা থেকেই ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন ছিল।

তিনি বলেন, “আমি সবসময় চেয়েছি একজন সফল ব্যবসায়ী হতে।” ১৭ বছর বয়সে তিনি বন্ধুদের নিয়ে একটি মিনিবাস ভাড়া করে একটি ক্লাব চালাতেন।

এরপর তিনি শ্রমিক সরবরাহকারী একটি এজেন্সি খোলেন, যেখানে লন্ডনে কাজের সুযোগ খুঁজছিলেন এমন কর্মীদের সহায়তা করা হতো। পরবর্তীতে তিনি একটি খাদ্য সরবরাহকারী কোম্পানিও চালান, যার ক্লায়েন্টদের মধ্যে ছিল অ্যাস্টন ভিলার যুব দল এবং কোভেন্ট্রি বিমানবন্দর।

এরিকের বাবা সব সময় বলতেন, “যা চাও, তার জন্য কাজ করতে হবে।” তার বাবা-মা জামাইকা থেকে এসে নুনেটনে বসবাস শুরু করেন।

এরিকের বাবা খনিতে কাজ করতেন এবং মা স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন। তাদের নিজেদের কোনো গাড়ি ছিল না। এরিকের বাবা প্রতিদিন খনির বাসে যাতায়াত করতেন।

ছেলেবেলায় এরিক একবার একটি স্কাউট ট্রিপে লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে রাস্তায় পোরশে গাড়ি দেখে তার মনে হয়েছিল, “নুনেটনে কেন এত পোরশে গাড়ি দেখা যায় না?” সেই থেকেই তার নিজের একটি পোরশে কেনার স্বপ্ন জাগে।

স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে তিনি একটি ভারী গাড়ির লাইসেন্স (HGV) সংগ্রহ করেন, যাতে ব্যবসার অনিশ্চয়তার সময় পরিবারকে সাহায্য করতে পারেন।

এরপর তিনি একটি পুরনো পোরশে কেনেন, যার দাম ছিল একটি নতুন ফোর্ড গাড়ির চেয়েও কম।

কিন্তু তিন বছর আগে গাম্বিয়ায় ছুটি কাটানোর সময় একটি দুর্ঘটনায় এরিকের কোমর ও শ্রোণীচক্রে গুরুতর আঘাত লাগে।

এরপর তিনি গাড়িটি বিক্রি করে দেন।

বর্তমানে এরিক তার ব্যবসার কাজে ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি কম্প্যাক্টর ভ্যান চালান, নতুন ব্যবসার প্রস্তাব দেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

তার প্রথম ক্লায়েন্ট ছিল পেনাইন কেয়ার এনএইচএস ট্রাস্ট। এরপর দুটি হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন তার গ্রাহক হয়। ‘সকোশ’ এরই মধ্যে দুটি ব্রিটিশ ব্যবসায়িক পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে।

তিনি তার ব্যবসার জন্য দ্বিতীয় একটি ভ্যান তৈরির অর্ডার দিয়েছেন।

এরিক বলেন, “কেউ কেউ হয়তো আমাদের ডাস্টবিন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু আমরা এমনভাবে কাজ করি, যেন আবর্জনা ছিলই না।

ঢাকনা বন্ধ হয়ে যায়, জায়গাটা পরিষ্কার থাকে। মানুষ এটাই চায়।” এরিক মনে করেন, ব্যবসার জগতে তিনি অবশেষে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য খুঁজে পেয়েছেন।

তার বাবা-মা মারা যান যখন তার বয়স ছিল ৩০ বছর। তিনি বলেন, “তাদের দেখানোর সুযোগ পাইনি যে আমি সফল।

হয়তো আমি জীবনভর চেষ্টা করে গেছি, নিজেকে প্রমাণ করার জন্য।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *