বদলে যাওয়া সিরিয়ার জন্য: ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্মেলনে!

সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের জন্য সহায়তার উদ্দেশ্যে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সম্মেলন। এই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে সিরিয়া।

দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে দেশটির অর্থনীতি ও অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, সিরিয়ার পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যে এই সম্মেলনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই সম্মেলনের আয়োজন করছে। সোমবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে ইইউ-এর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাসের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।

সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলো, সিরিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র, অন্যান্য আরব দেশ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সিরিয়ার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শিবানি সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করবেন।

আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব দেশের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করতে এবং ভেঙে যাওয়া অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়া পুনর্গঠনে অন্তত ২৫০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অঙ্কটি ৪০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে একটি বড় বাধা হলো পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞা। বাশার আল-আসাদের শাসনামলে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হয়েছিল এবং এখনো তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি।

ব্রাসেলস সম্মেলনে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে, যাতে নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা যায় এবং তারা দ্রুত সাহায্য পেতে পারে।

তবে সিরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা এবং প্রতিশোধমূলক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইইউ এক বিবৃতিতে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।

তারা একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, যেখানে কোনো প্রকার বিদেশি হস্তক্ষেপ থাকবে না এবং সকল সিরীয় নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হবে।

ইইউ মনে করে, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা প্রয়োজন, কারণ এতে জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে এবং বিশৃঙ্খলা কমবে। জনগণের জন্য ব্যাংকিং সেবাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে, ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর উত্থান সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সাবেক এইচটিএস নেতা আহমদ আল-শারার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে এবং তিনি একটি অস্থায়ী সংবিধান স্বাক্ষর করেছেন, যা আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত ইসলামি শাসন বহাল রাখবে।

আসাদ পরিবারের দীর্ঘ শাসনের অবসান হওয়ায় অনেকে খুশি হলেও, নতুন ইসলামপন্থী নেতাদের প্রতি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তারা দামেস্কের নতুন নেতৃত্বের প্রতি তাদের এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে দ্বিধা বোধ করছে।

অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটও তীব্র। বর্তমানে, সিরিয়ার মানুষ প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পায় না, পানির সরবরাহ নির্ভরযোগ্য নয়, বেকারত্বের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এবং ধ্বংসযজ্ঞ ব্যাপক।

২০১১ সালের আরব বসন্তের পর সংঘাত শুরু হলে অনেক সরকারি কর্মচারী ও বিশেষজ্ঞ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রায় ৪৭ লাখের বেশি শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডানে আশ্রয় নিয়েছে।

আসাদের পতনের পর প্রায় ৩ লাখ ২ হাজার শরণার্থী দেশে ফিরে এসেছে।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার মনে করেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, “আসাদ সরকারের তুলনায় এখন সিরিয়ার ভেতরে কাজ করা আমাদের জন্য অনেক সহজ।”

সোমবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো সাহায্য সংগ্রহ করা এবং সিরিয়ার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা। এর জন্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।

অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতি করতে হবে। সিরিয়ার নাগরিকদের জীবন ধারণের জন্য কর্মসংস্থান ও নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *