যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) কর্মসূচি এবং বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে এশীয়-আমেরিকান, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষের মধ্যে ভিন্ন মত দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এএপিআই ডেটা (AAPI Data) এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ডিইআই প্রোগ্রাম বন্ধ করা এবং প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার প্রবণতা বেশি। অন্যদিকে, বয়স্কদের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা ডিইআই প্রোগ্রামগুলোতে ফেডারেল সরকারের অর্থায়ন বন্ধ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়া, ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা বিতাড়িত করারও বিরোধিতা করেছেন তারা। তবে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই বিরোধিতা আরও বেশি।
৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ডিইআই প্রোগ্রামের তহবিল কমানোর এবং বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিপক্ষে।
অন্যদিকে, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী এএপিআই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে ভিন্নমত দেখা যায়। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ডিইআই প্রোগ্রামের তহবিল কমানো বা শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার বিরোধিতা করেন, যেখানে ৩০ শতাংশের কিছু বেশি এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। বাকিরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জরিপে আরও দেখা যায়, এএপিআই সম্প্রদায়ের মানুষ, বয়স নির্বিশেষে, ভালো একটি চাকরি এবং পরিবারকে ভালোভাবে চালানোর জন্য উচ্চশিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বয়সের পার্থক্যের কারণে এই মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন, যেখানে ডিইআই প্রোগ্রামগুলো তাদের কাছে পরিচিত। অন্যদিকে, বয়স্কদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের শিক্ষাজীবন এশিয়ায় কাটিয়েছেন, যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থা ভিন্ন ধরনের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিইআই কর্মসূচিগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী, বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থীরা, নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ডিইআই প্রোগ্রামগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়, যার ফলস্বরূপ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মুখ ঢেকে বিক্ষোভ করা এবং প্রতিবাদকারীদের আইডি কার্ড দেখানোর মতো নিয়ম চালু করা হয়েছে।
এই জরিপটি গত ৭ থেকে ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে ১,০৯৪ জন এশীয়-আমেরিকান, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষের উপর চালানো হয়। জরিপে ইংরেজি, ম্যান্ডারিন ও ক্যান্টনিজ চীনা, ভিয়েতনামি এবং কোরিয়ান ভাষায় সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এই জরিপের মার্জিন অফ স্যাম্পলিং এরর (sampling error) ছিল প্রায় ৪.৮ শতাংশ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস