আর্মাডিলো: আফ্রিকার এক বিস্ময়কর প্রাণী।
আফ্রিকার তৃণভূমি ও সাভানা অঞ্চলে বাস করা এক অদ্ভুত প্রাণী হলো আর্মাডিলো। এদের শরীর মোলায়েম লোমশ, শুয়োরের মতো নাক এবং লম্বা কান এদেরকে অন্যরকম করে তোলে।
আর্মাডিলো নামটি এসেছে একটি আফ্রিকান শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘মাটির শুয়োর’। এই নামটি তাদের খাদ্যাভ্যাস ও বাসস্থান উভয়ের সঙ্গেই মানানসই।
আর্মাডিলোর গড় ওজন প্রায় ৬৫ কেজি, যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওজনের কাছাকাছি। এদের শরীর লম্বায় ২.২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
মজার বিষয় হলো, এরা ভালো সাঁতার কাটতে পারে। জলের গভীরে এরা বেশ কিছুক্ষণ ডুব দিতে সক্ষম।
আর্মাডিলোর প্রধান খাদ্য হলো পিঁপড়া ও উইপোকা। এদের লম্বা, আঠালো জিহ্বা থাকে, যা দিয়ে তারা খুব সহজেই পোকামাকড় ধরে খেতে পারে।
গভীর রাতে এরা খাবারের সন্ধানে বের হয়। পোকামাকড়ের সন্ধানে এরা মাটি খুঁড়ে গর্ত তৈরি করে।
আর্মাডিলো একাকী জীবন যাপন করতে পছন্দ করে। তবে প্রজননকালে এরা মিলিত হয়।
বন্য পরিবেশে আর্মাডিলো সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। বন্দী অবস্থায় এরা প্রায় ২৪ বছর বা তার বেশি দিন বাঁচতে পারে।
আর্মাডিলোর জীবনযাত্রা বেশ আকর্ষণীয়। এরা আফ্রিকার বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে পরিচিত।
আফ্রিকার কিছু উপজাতি, যেমন – হাউসা ও মারগবেতু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশ্বাস করে, আর্মাডিলোর চামড়া ও শিকড়ের তৈরি তাবিজ তাদের বিশেষ ক্ষমতা দেয়।
এই বিশ্বাস তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ।
গণমাধ্যমেও আর্মাডিলোর উপস্থিতি দেখা যায়। ‘দ্য লায়ন কিং’ (২০১৯) এবং ‘আইস এজ: ডন অফ দ্য ডাইনোসরস’ (২০০৯)-এর মতো চলচ্চিত্রে এদের দেখা গেছে।
এমনকি, ‘আর্মাডিলো’ নামে চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে, আর্মাডিলোকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তবে, এদের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় এদের জীবনধারণের ঝুঁকি বাড়ছে।
বন্য পরিবেশে এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো শিকার এবং মানুষের বসতি স্থাপন।
আফ্রিকার বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানে আর্মাডিলোদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি, ইংল্যান্ডের একটি চিড়িয়াখানায় ‘রু’ নামের একটি আর্মাডিলোর জন্ম হয়, যা বিশ্বজুড়ে প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
আর্মাডিলো একটি অনন্য প্রাণী। এদের সম্পর্কে আরও জানা ও এদের সংরক্ষণে সহায়তা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার