ওয়াশিংটন ডিসি’র প্রভাবশালী আইনজীবী অ্যাবে লোয়েলের নাম বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ আলোচিত। ৭৩ বছর বয়সী এই আইনজ্ঞ পরিচিতি পেয়েছেন এমন সব ব্যক্তির আইনি লড়াইয়ে সহায়তার মাধ্যমে, যারা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কারণে বর্তমানে তিনি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে অ্যাবে লোয়েলকে দেখা গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে। তিনি প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, যখন মেরিল্যান্ডের একটি ফেডারেল আদালতে তার বিরুদ্ধে গোপন তথ্য বেহাত করার অভিযোগ আনা হয়।
এর কয়েকদিন পরেই ফিলাডেলফিয়ার ফেডারেল আপিল আদালতে তিনি ট্রাম্পের মনোনীত নিউ জার্সির অ্যাটর্নিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য যুক্তি দেন। এমনকি নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের ব্যাংক জালিয়াতি এবং মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগে ফেডারেল আদালতে শুনানিতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।
লোয়েলের খ্যাতি বহু বছর ধরে ওয়াশিংটন ডিসি’র রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্তৃত। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আইনি সহায়তা দেওয়া এবং টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে এসে জনমত গঠনে সহায়তা করার মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন। বর্তমানে ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত অনেক ব্যক্তির আইনি লড়াইয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাবে লোয়েল একজন ‘আইনজীবীদের আইনজীবী’। তার মক্কেলদের মধ্যে রয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
এমনকি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনও তার মক্কেল ছিলেন।
মার্ক জেইড, যিনি হুইসেলব্লোয়ারদের (whistleblowers) প্রতিনিধিত্ব করেন, এক সাক্ষাৎকারে লোয়েলের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি আইনের শাসনের পক্ষে লড়াই করেন।
এই প্রশাসনের আমলে আইনের শাসনের অবমূল্যায়ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অ্যাবে লোয়েলের মতো আইনজীবীর খুব প্রয়োজন।”
এ বছর শুরুতে লোয়েল ওয়াশিংটনের একটি বৃহৎ আইনি সংস্থা, উইনস্টন অ্যান্ড স্ট্রন থেকে বের হয়ে আসেন এবং নিজের ফার্ম খোলেন। তার ফার্মে তরুণ আইনজীবীদের একটি দলও রয়েছে।
বর্তমানে তিনি লেটিশিয়া জেমস, জন বোল্টন, মার্ক জেইড ছাড়াও ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুক, প্রাক্তন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চিফ অফ স্টাফ মাইলস টেলর এবং সাবেক এফবিআই এজেন্ট ও বিচার বিভাগের প্রসিকিউটরদের মতো ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দিচ্ছেন, যাদেরকে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তবে, অ্যাবে লোয়েল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি একটি শূন্যতা পূরণের জন্য এই ফার্মটি তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা ছিল এই পদক্ষেপের মূল কারণ।
আমি প্রতিটি প্রশাসনে সরকারের বাড়াবাড়িকে চ্যালেঞ্জ করেছি, তবে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের মাত্রা অনেক বেশি ছিল, তাই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল।”
অ্যাবে লোয়েল নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে জন্মগ্রহন করেন এবং লং আইল্যান্ডে বেড়ে ওঠেন। কলম্বিয়া ল স্কুল থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি দ্রুত ওয়াশিংটনের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
তিনি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অভিশংসন প্রক্রিয়ায় ডেমোক্রেটদের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান গ্যারি কন্ডিতের আইনজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মামলাগুলোতে অ্যাবে লোয়েলকে বিশেষ দক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার বন্ধু ও সহকর্মী আইনজীবী রেইড উইংগার্টেন বলেন, “রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোতে ভালো করার জন্য আদালতে পারদর্শী হওয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটনের কার্যকারিতা সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হয়।
অ্যাবে দুটোতেই পারদর্শী।
সাবেক ডেমোক্রেট সিনেটর বব মেনেন্ডেজ যখন ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত হন, তখন তিনি লোয়েলের সহায়তা নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ট্রাম্পের সহযোগী টম বারাকের সাবেক সহকারী ম্যাথিউ গ্রাইমসের আইনি লড়াইয়েও লোয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তবে, অ্যাবে লোয়েলের কিছু কৌশল সমালোচিতও হয়েছে।
কেউ কেউ তার কঠোর এবং আক্রমণাত্মক পদ্ধতির সমালোচনা করেন। হান্টার বাইডেনের মাদকাসক্তি এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মামলার শুনানিতে তিনি যে ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন