আত্মা মুক্তি পাবে: ১৭০ বছর পর আদিবাসীর কঙ্কাল ফিরিয়ে দিল যুক্তরাজ্য!

ঐতিহাসিক এক ঘটনার সাক্ষী থাকল বিশ্ব। প্রায় ১৭০ বছর আগে, আদিবাসী এক তরুণের কঙ্কাল, যিনি তাসমানিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের ‘বিগ রিভার’ গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, অবশেষে ফিরে এলেন নিজের জন্মভূমিতে।

স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় এই কঙ্কালটি ১৮৫০ সাল থেকে নিজেদের কাছে রেখেছিল। বৃহস্পতিবার, তাসমানিয়ার আদিবাসী কেন্দ্র (Tasmanian Aboriginal Centre)-এর প্রতিনিধিরা এই কঙ্কালটি নিয়ে হোবার্টে (Hobart) পৌঁছান।

শুধু কঙ্কালই নয়, সঙ্গে ফিরে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস – একটি ঝিনুকের মালা। ১৮৮০-এর দশকে বাস্ট স্ট্রেইট দ্বীপের একজন আদিবাসী নারী এই মালাটি তৈরি করেছিলেন।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হান্টারিয়ান মিউজিয়ামে (Hunterian Museum) এটি এতদিন সংরক্ষিত ছিল। ১৯৯৪ সাল থেকে এই কেন্দ্র মালাটি ফেরত পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল।

এই ঘটনা আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাসমানিয়ান আদিবাসী কেন্দ্রের নলা ম্যানসেল (Nala Mansell) জানিয়েছেন, “এই প্রত্যাবাসন আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

এর মাধ্যমে অতীতের অন্যায়গুলো স্বীকার করা হলো এবং আমাদের পূর্বপুরুষকে তাঁর জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলো, যেখানে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।”

অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে কঙ্কালটি ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। মার্চের শুরুতে স্কটল্যান্ডে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কঙ্কালটি হস্তান্তর করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, উনিশ ও বিশ শতকে এই কঙ্কালটি শিক্ষাদানের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহ বিভাগের প্রধান নীল কার্টিস (Neil Curtis) বলেন, “আমরা আনন্দিত যে, এই যুবকের দেহাবশেষ এখন তাঁর জন্মভূমিতে সমাধির জন্য হস্তান্তর করা হলো।”

বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এই কঙ্কালটি সংগ্রহ করেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, ১৮৫২ সালের পর এটি একটি সংগ্রহের অংশ হিসেবে কেনা হয়েছিল।

সে সময় এটিকে ‘ভ্যান ডাইমেন’স ল্যান্ডের (তাসমানিয়ার পুরনো নাম) আদিবাসী, যিনি শ্যানন নদীতে নিহত হয়েছিলেন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

১৪৮ সেন্টিমিটার লম্বা ঝিনুকের মালাটিতে তাসমানিয়ার উপকূল থেকে সংগৃহীত ‘এলেনচাস’ বা ‘মেইরিনার’ ঝিনুক ব্যবহার করা হয়েছে।

আদিবাসী কেন্দ্র ১৯৯৫ ও ২০০২ সালে মালাটি ফেরত চেয়েছিল, কিন্তু সে সময় এর সংগ্রহ অনৈতিকভাবে করা হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ না থাকায় তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

বর্তমানে, উভয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্যে থাকা আরও কিছু দেহাবশেষ ও সাংস্কৃতিক সামগ্রী ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছে।

আন্দ্রি স্কালথর্প (Andry Sculthorpe) জানান, “আমরা ১৯৭০-এর দশক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

এখনকার পরিস্থিতি হলো, আগে যেসব প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইত না বা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে রাজি ছিল না, তারাও এখন আলোচনায় বসতে চাইছে।

আমরা মনে করি, এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।”

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *