আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের চাহিদা এবং সরবরাহ নিয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে আগামী বছর তেলের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিত করেছে ওপেক প্লাস। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পেট্রোলিয়াম প্রদর্শনী ও সম্মেলনে (Abu Dhabi International Petroleum Exhibition and Conference) এমনটা জানা গেছে।
সংস্থাটি ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে দৈনিক ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। ওপেক প্লাস-এর এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে বাজারের পরিস্থিতি এবং তেলের দাম স্থিতিশীল রাখার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল প্রায় ৬৫ মার্কিন ডলার, যা এক সময় ১১৫ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল।
আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বক্তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং বিমান চলাচলের কারণে তেলের চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি ‘আবু ধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি’র প্রধান সুলতান আল-জাবের বলেন, জ্বালানি বাজারের সংস্কার প্রয়োজন, প্রতিস্থাপন নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মেলনে যোগ দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী ডগ বার্গাম এই মন্তব্যের প্রশংসা করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চরমপন্থি নীতির সমালোচনা করেন। তিনি আরও যোগ করেন, বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, তাই জ্বালানির সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
অন্যদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে রাশিয়ার তেল কোম্পানি- রোজনেফট এবং লুকোয়েলের মতো সংস্থাগুলো। উল্লেখ্য, যুদ্ধের মধ্যেও সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দী বিনিময়ে মধ্যস্থতা করেছে।
তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সম্মেলনে কিছুটা গুরুত্ব হারিয়েছে। যদিও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন, কিন্তু আমিরাত তাদের তেল উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যা পরিবেশ বিষয়ক আলোচনার সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক। কাতার জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনমনীয় হয়, তাহলে তারা ইউরোপে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওপেক প্লাস-এর এই উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত বাজারের অস্থিরতা কমাতে এবং তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে, রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেমন হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
এই সম্মেলনের আলোচনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের পরিবর্তন সরাসরি আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। তেলের দাম বাড়লে আমদানি খরচ বাড়ে, যা দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে। তাই, বিশ্ব বাজারে তেলের উৎপাদন ও দামের এই পরিবর্তনগুলো আমাদের বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: