সংযুক্ত আরব আমিরাতের (United Arab Emirates – UAE) রাজধানী আবুধাবি ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। দুবাইয়ের ঝলমলে আলোয় অনেক সময় এর সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যায়, তবে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক দারুণ মিশ্রণ ঘটিয়ে আবুধাবি নিজেকে তুলে ধরেছে স্বকীয় রূপে।
যারা সংস্কৃতি ভালোবাসেন, স্থাপত্যশৈলী দেখতে পছন্দ করেন, অথবা নিছক ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য আবুধাবি হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
পর্যটন পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এর প্রমাণ মেলে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এখানে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে, যা প্রায় ৪৮ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
আবুধাবির সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের পরিচালক মো. নওবানি জানান, “আবুধাবি তার অনন্য পরিবেশ ও অবস্থানের কারণে বিশ্বমানের আকর্ষণীয় স্থান ও অভিজ্ঞতা প্রদান করে।”
আবুধাবির প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। এটি ইসলামিক স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন, যেখানে মার্বেল পাথরের কারুকার্য, বিশাল গম্বুজ এবং ঝাড়বাতি দর্শকদের মুগ্ধ করে।
যেকোনো ধর্মের মানুষ এখানে প্রবেশ করতে পারে, তবে পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হয়।
এছাড়াও, এখানকার কাসর আল ওয়াতান (Qasr Al Watan) – যা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, আবুধাবির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক অগ্রগতির প্রতীক।
২০১৭ সালে খোলা হওয়া ল্যুভর আবুধাবি (Louvre Abu Dhabi) – যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির (Leonardo da Vinci) মতো বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের কাজ প্রদর্শিত হয়।
প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরের আদলে তৈরি এই জাদুঘরটি শিল্প, ইতিহাস এবং আধুনিকতার এক চমৎকার সংমিশ্রণ।
আবুধাবির আকর্ষণ শুধু স্থাপত্য আর সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে রয়েছে সাদা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, ইয়াস দ্বীপের (Yas Island) মতো বিনোদন কেন্দ্র, যেখানে ফেরারি ওয়ার্ল্ড (Ferrari World) ও টিমল্যাব ফেনোমেনা আবুধাবির (teamLab Phenomena Abu Dhabi) মতো আকর্ষণগুলো ভ্রমণকারীদের আনন্দ দেয়।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তারা ম্যানগ্রোভ ন্যাশনাল পার্কে (Mangrove National Park) যেতে পারেন, যেখানে বোট রাইড অথবা কায়াকিং-এর (kayaking) মাধ্যমে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
আবুধাবির অভিজাত হোটেলগুলোও পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এমিরেটস প্যালেস ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল (Emirates Palace Mandarin Oriental), যা পারস্য উপসাগরের (Persian Gulf) সুন্দর দৃশ্যের সাথে আধুনিক স্থাপত্যের এক চমৎকার উদাহরণ।
এখানে রয়েছে বিশ্বমানের রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল এবং ব্যক্তিগত সৈকত। এছাড়াও, আনান্তারা ইস্টার্ন ম্যানগ্রোভস আবুধাবি হোটেল (Anantara Eastern Mangroves Abu Dhabi Hotel) এবং সেন্ট রেজিস সা’দিয়াত আইল্যান্ড রিসোর্ট (St. Regis Saadiyat Island Resort) -এর মতো বিলাসবহুল হোটেলগুলোতেও আপনি থাকতে পারেন।
আবুধাবির খাবারের স্বাদও অনন্য। এখানে মধ্যপ্রাচ্যের (Middle Eastern), ভারতীয়, ইরানি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ নেওয়া যায়।
এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন শওর্মা, ফালাফেল, হুমুস, মাখবুস ও খুজি খুবই জনপ্রিয়। যারা ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করেন, তারা মিশেলিন স্টার প্রাপ্ত এরথ রেস্টুরেন্টে (Erth restaurant) যেতে পারেন।
আবুধাবির আবহাওয়া সাধারণত উষ্ণ থাকে। শীতকালে, অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি হতে পারে, তবে বাজেট-বান্ধব পর্যটকদের জন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন অফার থাকে।
আবুধাবিতে যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো আকাশপথ। বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরা সরাসরি অথবা দুবাই হয়ে আবুধাবির জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Zayed International Airport – AUH) যেতে পারেন।
এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো, তাই ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি নিরাপদ গন্তব্য।
আবুধাবির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রত্যেক ভ্রমণকারীর জন্য জরুরি। এখানে ইংরেজি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
তবে স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে, সেই অনুযায়ী পোশাক পরিধান করা উচিত। রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত ১০-১৫ শতাংশ টিপস দেওয়া হয়।
আশা করা যায়, আবুধাবির এই মনোমুগ্ধকর জগৎ ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure