হামদান বাল্লালের উপর আক্রমণে অ্যাকাডেমির নীরবতা, অবশেষে মুখ খুলল?

অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর সহ-পরিচালক হামদান বাল্লালকে সম্প্রতি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা মারধর করে এবং পরে তাকে আটক করা হয়। এই ঘটনার পরে অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস (Academy of Motion Picture Arts and Sciences) প্রথমে বাল্লালের নাম উল্লেখ না করে বিবৃতি দেওয়ায় সমালোচনার শিকার হয়।

পরে তারা তাদের এই পদক্ষেপের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। জানা যায়, গত সোমবার, বাল্লালকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা মারধর করে এবং পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাকে আটক করে।

এর কয়েক সপ্তাহ আগেই বাল্লাল এবং তাঁর সহ-পরিচালকরা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছিলেন।

শুরুতে অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে শিল্পীদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের কাজের ওপর বাধা দেওয়ার নিন্দা করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। তবে চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই এই প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেন।

চলচ্চিত্র সমালোচক এবং ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর সহ-পরিচালক ইউভাল আব্রাহাম এই বিবৃতিকে ‘হামদানের ওপর হামলার বিষয়ে নীরবতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

পরে, অ্যাকাডেমির ১১ হাজার সদস্যের মধ্যে ৬০০ জনের বেশি সদস্য একটি খোলা চিঠি লেখেন, যেখানে বলা হয়, অ্যাকাডেমির আগের বিবৃতিটি এই মুহূর্তের চাহিদার থেকে অনেক দূরে ছিল।

এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন জোয়াকিন ফিনিক্স, অলিভিয়া কোলম্যান, রিজ আহমেদ, এমা থম্পসন, হাভিয়ের বারদেম, পেনেলোপে ক্রুজ এবং ‘দ্য জোন অফ ইন্টারেস্ট’ চলচ্চিত্র নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার-এর মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিরা।

শুক্রবার অ্যাকাডেমির বোর্ড অফ গভর্নরের বৈঠকের পর অ্যাকাডেমির প্রধান নির্বাহী বিল ক্রেমার এবং প্রেসিডেন্ট জ্যানেট ইয়াং একটি নতুন বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, “আমরা আন্তরিকভাবে জনাব বাল্লাল এবং সকল শিল্পীর কাছে ক্ষমা চাই, যারা আমাদের আগের বিবৃতিতে সমর্থন পাননি।

আমরা পরিষ্কার করতে চাই যে, অ্যাকাডেমি বিশ্বের কোথাও এ ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানায়। আমরা কোনো অবস্থাতেই বাকস্বাধীনতাকে দমন করা সমর্থন করি না।”

বাল্লালকে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটক রাখার পর ইসরায়েলি সেনারা মুক্তি দেয়। বাল্লাল এবং আরও দুই ফিলিস্তিনিকে এক বসতি স্থাপনকারীর দিকে পাথর নিক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

যদিও তাঁরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মুক্তির পর বাল্লাল সাংবাদিকদের জানান, তাঁর গ্রামে আক্রমণের সময় এক বসতি স্থাপনকারী তাঁর মাথায় লাথি মেরেছিল।

বাল্লাল আরও বলেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম, তারা বিশেষভাবে আমার ওপর আক্রমণ করছে। যখন তারা ‘অস্কার’ (Oscar) বলে, তখন আপনি বোঝেন।

যখন তারা আপনার নাম ধরে ডাকে, তখনও আপনি বোঝেন।”

‘নো আদার ল্যান্ড’ একটি যৌথ ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র, যা মাসাফের ইয়াত্তার পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এলাকাটিকে লাইভ-ফায়ার প্রশিক্ষণ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের, যাদের অধিকাংশই ছিল আরব বেদুইন, তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে।

প্রায় ১০০০ বাসিন্দা এখনো সেখানে বসবাস করছেন, তবে সেনারা নিয়মিতভাবে তাঁদের বাড়িঘর, তাঁবু, পানির ট্যাঙ্ক এবং জলপাই বাগান ধ্বংস করে থাকে।

ব্যাপক প্রশংসা পাওয়ার পরেও, ‘নো আদার ল্যান্ড’ চলচ্চিত্রটির কোনো মার্কিন পরিবেশক ছিল না।

পরে এটি সিনেমা হলে স্ব-উন্মোচন করা হয় এবং উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাগৃহে এটি ২০ কোটির বেশি টাকার ব্যবসা করতে সক্ষম হয়।

এরপর চলচ্চিত্রটি অস্কার পুরস্কার জেতে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *