শিরোনাম: এক ‘অ্যাসিড কুইন’-এর অজানা জীবন: বিপ্লবী তিমোথি লিরির পাশে থাকা এক নারীর গল্প
ষাটের দশকে, যখন সারা বিশ্বে মাদক এবং বিদ্রোহের ঢেউ লেগেছিল, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিমোথি লেরি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এলএসডি নিয়ে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে তাঁর চ্যালেঞ্জ, সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন এক বিতর্কিত চরিত্র।
এই লেরির সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল রোজমেরি উডরুফ লেরির নাম, যিনি ছিলেন লেরির চতুর্থ স্ত্রী। সম্প্রতি প্রকাশিত সুজানা ক্যাহালানের জীবনী ‘দ্য অ্যাসিড কুইন’-এ উঠে এসেছে রোজমেরির সেই অজানা জীবন, যা এতদিন ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে।
রোজমেরি উডরুফের জন্ম ১৯৩৫ সালে, আমেরিকার সেন্ট লুইসে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন জাদুকর এবং মা ছিলেন একজন অপেশাদার ক্রিপ্টোলজিস্ট। ছোটবেলা থেকেই রোজমেরির স্বপ্ন ছিল, তাঁর চারপাশের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসা।
সুযোগ খুঁজতে তিনি পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কে, যেখানে তিনি ইসরায়েলি বিমান সংস্থা এল অ্যালে একটি বিমান সেবিকার চাকরি পান। এরপর তিনি আফগানিস্তানে যান এবং সেখানে বোরকা পরে বিভিন্ন কাজ করেন। রোজমেরি সবসময়ই অন্যরকম কিছু খুঁজতেন।
তিনি আন্তোইন আর্তো, সায়েন্স ফিকশন এবং থিওসফির প্রতি আকৃষ্ট হন। জ্যাজ ক্লাবে তাঁর অবাধ আনাগোনা ছিল।
রোজমেরির জীবনে আসে অনেক পুরুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন একজন ওলন্দাজ অ্যাকর্ডিয়ান বাদক এবং একজন টেনর স্যাক্সোফোনবাদক। পরে, এক গ্যালারিতে তিমোথি লেরির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।
লেরির “চেতনার শ্রবণ-দৃষ্টি-অনুভূতির পরিবর্তন”-এর ধারণা রোজমেরিকে আকৃষ্ট করে। এরপর তাঁরা দু’জনে নিউ ইয়র্কের একটি সাইকেডেলিক কমিউনে যান। সেখানে রোজমেরি খুঁজেছিলেন “ইন্দ্রিয়গত আনন্দ এবং মানসিক উত্তেজনা।”
পরবর্তী বছরগুলো ছিল লেরির খ্যাতি ও বিতর্কের কাল। তিনি প্লেবয়-এর পাঠকদের বলেছিলেন, এলএসডি সেবনের পর মহিলারা যৌন মিলনে শত শত অর্গাজম অনুভব করবেন। লেরি আরও দাবি করেছিলেন যে এই মাদক শ্বেতাঙ্গদের “কৃষ্ণবর্ণ” করে দেবে, যাতে তারা “প্রাকৃতিক শারীরিক আনন্দের” জীবন অনুসরণ করতে পারে।
এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর পদের জন্য অভিনেতা রোনাল্ড রেগানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময়, রোজমেরি তাঁর প্রচারণার জন্য একটি স্লোগান তৈরি করেন: “এসো একসাথে, পার্টিতে যোগ দাও”।
সুজানা ক্যাহালানের মতে, রোজমেরি ছিলেন একজন “প্রাকৃতিক পুরোহিত”। তিনি লেরির সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। লেরির বক্তৃতা লেখা থেকে শুরু করে তাঁর পোশাক তৈরি এবং কারাগার থেকে পালাতে সাহায্য করা—সবকিছুতেই রোজমেরির অবদান ছিল।
তবে, লেরির জীবন ছিল নানা উত্থান-পতনে ভরা। মাদক রাখার অভিযোগে তিনি কারারুদ্ধ হন, কিন্তু রোজমেরি তাঁকে পালাতে সাহায্য করেন। এই ঘটনার পর রোজমেরিকে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে হয়।
১৯৭৬ সালে লেরি এবং রোজমেরির বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
বিচ্ছেদের পরও রোজমেরির জীবন ছিল ঘটনাবহুল। তিনি একটি “বিশ্ব পাসপোর্ট” ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। ইতালির একটি গোপন গুহায় তিনি ভালোবাসার স্বাদ গ্রহণ করেন, কলম্বিয়ার মাদক চক্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৯৪ সালে তিনি আবার প্রকাশ্যে আসেন।
যদিও তিনি তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ করতে পারেননি, তবে সুজানা ক্যাহালানের এই জীবনী রোজমেরির মুক্ত, অনুসন্ধানী আত্মার প্রতি উৎসর্গীকৃত।
আজকের বিশ্বে যখন মাইক্রোডোজিংয়ের প্রবণতা বাড়ছে, তখন ক্যাহালান সতর্ক করে বলেন, “সাইকেডেলিকস-এর উত্থান পতনের কারণগুলো এখনো বিদ্যমান: ধর্মপ্রচার এবং অহংকার।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান