আজকের দিনে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকের জীবনেই দেখা যায়। ব্যস্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত জল পান না করা এবং মানসিক চাপ—এসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বিভিন্ন উপায় খুঁজে থাকেন। এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো আকুপ্রেশার (Acupressure) নামক একটি পদ্ধতির বিষয়ে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
আকুপ্রেশার হলো প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতির একটি অংশ। এই পদ্ধতিতে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে চাপ প্রয়োগ করে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে উন্নত করা হয়।
ধারণা করা হয়, আমাদের শরীরে ‘কি’ (Qi) নামক এক ধরনের শক্তি প্রবাহিত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তন্ত্রকে সচল রাখতে সহায়তা করে। আকুপ্রেশার এই ‘কি’ শক্তির প্রবাহকে সঠিক পথে আনতে সাহায্য করে এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বাড়ায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আকুপ্রেশারের কিছু বিশেষ স্থান বা পয়েন্ট রয়েছে।
- সান জিয়াও ৬ (San Jiao 6): এই পয়েন্টটি সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি পেটের নিচের অংশের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, যার মধ্যে ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, কিডনি এবং মূত্রথলিও অন্তর্ভুক্ত।
- স্টমাক ২৫ (Stomach 25): এই স্থানে চাপ দিলে হজম ক্ষমতা উন্নত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া—উভয় ক্ষেত্রেই এটি উপকারী।
- স্প্লিন ১৫ (Spleen 15): এই পয়েন্টটি স্টমাক ২৫ এর কাছাকাছি অবস্থিত। এটি অন্ত্রের স্বাভাবিক গতি বাড়াতে সাহায্য করে।
- লিভার ৩ (Liver 3): পায়ের এই পয়েন্টটি মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। মানসিক চাপের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এটি উপকারী।
- লার্জ ইন্টেস্টাইন ৪ (Large Intestine 4): এই পয়েন্টটিও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ থেকে হওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক।
- কিডনি ৬ (Kidney 6): পায়ের এই আকুপ্রেশার পয়েন্টটি অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
আকুপ্রেশার কীভাবে কাজ করে? এই পদ্ধতি অন্ত্রের পেশীগুলোর স্বাভাবিক সঞ্চালনে সাহায্য করে (peristalsis), যা মলত্যাগে সহায়তা করে। এছাড়া, এটি ভেগাস স্নায়ুকেও সক্রিয় করে, যা হজমক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আকুপ্রেশার এন্ডোরফিন (endorphins) নিঃসরণ বাড়ায়, যা পেশী শিথিল করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
তবে, আকুপ্রেশার সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ আকুপ্রেশার পয়েন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।
এছাড়া, কারো যদি ত্বকে কোনো ক্ষত থাকে, শরীরে ফোলা ভাব বা নতুন কোনো আঘাত লাগে, অথবা ভেরিকোজ ভেইন (varicose veins)-এর সমস্যা থাকে, তবে আকুপ্রেশার করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আকুপ্রেশার করার ফলে চামড়ায় সামান্য কালশিটে পড়া বা ব্যথা হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য আরও কিছু উপায় রয়েছে। পর্যাপ্ত জল পান করা, আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘরোয়া উপায়ে সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে যদি মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব অথবা গ্যাস নির্গত করতে সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আকুপ্রেশার কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। তবে, এটি কোনো চিকিৎসার বিকল্প নয়। কোনো শারীরিক সমস্যা হলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন