আবহাওয়ার বিপর্যয় রুখতে হাস্যরস কেন জরুরি? জানালেন পরিচালক

শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় হাস্যরসের আশ্রয়: এক চলচ্চিত্র নির্মাতার ভাবনা

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আজ এক মারাত্মক উদ্বেগের কারণ। পৃথিবীর অনেক দেশেই এর ভয়াবহ প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে, যার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশও।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় – এমন নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এমন পরিস্থিতিতে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং মানুষের মধ্যে প্রতিকারের আগ্রহ জাগাতে এক ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যাডাম ম্যাককে।

‘ডন্ট লুক আপ’ (Don’t Look Up)-এর মতো ছবিতে হাস্যরসের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের ধারণা তুলে ধরে পরিচিতি পাওয়া এই নির্মাতা মনে করেন, এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাস্যরস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ম্যাককের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন এমন এক সংস্কৃতি তৈরি করা, যা এই বিশাল বিপর্যয়কে হাস্যরসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

এই ধারণা থেকেই তিনি ‘ইয়েলো ডট স্টুডিওস’ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করেছেন।

এর মূল উদ্দেশ্য হলো, কৌতুকপূর্ণ ভিডিওর মাধ্যমে মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা। তাঁর স্টুডিওর তৈরি করা কিছু ভিডিও এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, একটি কাল্পনিক শেভরন বিজ্ঞাপন, যেখানে প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্যের সঙ্গে তেল কোম্পানির পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপের তুলনা করা হয়েছে।

এছাড়া, ‘গেম অফ থ্রোনস’-এর অনুকরণে তৈরি করা একটি ভিডিওতে ‘হোয়াইট ওয়াকার’-এর বদলে জলবায়ু বিজ্ঞানীর চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

ম্যাককের বিশ্বাস, এই ধরনের হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

তাঁর মতে, প্রচলিত ‘নিওলিবারেল পেশাদারিত্বপূর্ণ’ আলোচনার বদলে কৌতুকপূর্ণ, তীক্ষ্ণ বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে এই সংকটকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরা সম্ভব।

হাসির মাধ্যমে রাগ, ক্ষোভ এবং গভীর আন্তরিকতাকে একসঙ্গে প্রকাশ করা যায়, যা মানুষের কাছে সমস্যাটিকে আরও বেশি বাস্তব করে তোলে।

তিনি মনে করেন, ক্রিস রক বা জর্জ কার্লিনের মতো খ্যাতিমান কৌতুক অভিনেতাদের মতো, হাস্যরস মানুষকে অনেক কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ সত্যের মুখোমুখি করতে পারে।

তবে, এই ধরনের পদ্ধতির কার্যকারিতা এখনো সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত নয়।

কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মতো নানা কৌশল চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষকে আরও বেশি সক্রিয় করতে, অ্যাডাম ম্যাককের এই অভিনব প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হবে, তা ভবিষ্যতই বলবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *