ছোট্ট প্রাণী, যাদের জন্ম হয় পৃথিবীর বুকে, তাদের জীবন সবসময়ই এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। এই দুর্বল সময়ে তাদের টিকে থাকার জন্য প্রকৃতি বিভিন্ন কৌশল তৈরি করেছে।
এই কৌশলগুলো তাদের শিকারী থেকে বাঁচায় এবং বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। আসুন, আজ আমরা এমনই কিছু বিস্ময়কর কৌশল সম্পর্কে জানি।
কিছু প্রাণী, যেমন হরিণ বা জেব্রা, জন্মের কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাঁটতে শুরু করে। তারা দ্রুত দৌড়াতে এবং মায়ের সঙ্গে থাকতে পারে।
মায়ের তত্ত্বাবধানে তারা খাবার খুঁজে পাওয়া এবং বিপদ থেকে পালিয়ে বাঁচতে শেখে। অন্যদিকে, কিছু পাখি, যেমন উটপাখি বা ময়না, জন্ম নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো শুরু করে।
মা তাদের খাবার খুঁজে দেয়, ঝড়ের হাত থেকে বাঁচায় এবং কীভাবে বিপদ থেকে পালাতে হয়, সেই শিক্ষা দেয়।
আবার, কিছু প্রাণী আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় খোঁজে। অনেক পাখি ঘাস বা বালুর মধ্যে বাসা তৈরি করে এবং ডিম পাড়ে, যা চারপাশের সঙ্গে মিশে যায়।
বাচ্চাগুলোও তাদের মতো দেখতে হয়, ফলে শিকারীর চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। কিছু জলজ কীট পাথরের নিচে লুকিয়ে থাকে। গেকো নামের টিকটিকি গাছের ছালের সঙ্গে মিশে যায়।
তবে সবথেকে আকর্ষণীয় কৌশল হলো, অনেক প্রাণী তাদের সন্তানদের প্রতিপালন করে। বাঘের বাচ্চারা মায়ের সঙ্গেই থাকে এবং মা তাদের শিকার করা শেখায়।
শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং-এর মতো প্রাইমেটরা তাদের বাচ্চাদের সবসময় নিজেদের সঙ্গে রাখে, তাদের নিরাপত্তা দেয় এবং জীবনের পাঠ শেখায়। মানুষসহ আরো অনেক স্তন্যপায়ী প্রজাতি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে।
হাতি, ডলফিন এবং তিমিদের বাচ্চারাও অনেক বছর ধরে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে।
এই কৌশলগুলো হয়তো আমাদের কাছে খুব সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতির বিবর্তনে এগুলো টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো কৌশল কাজে না লাগে, তাহলে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, মালয় অঞ্চলের একটি টেপির-এর (Tapir) কথা ভাবুন। টেপির-এর বাচ্চাগুলি সাদা এবং কালো ডোরাকাটা দাগযুক্ত হয়, যা তাদের ঘাস ও জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
মায়ের শরীর সাদা-কালো হলেও, বাচ্চাদের এই বিশেষ ছদ্মবেশ তাদের শিকারীর হাত থেকে বাঁচায়।
প্রকৃতির এই বিস্ময়কর কৌশলগুলো আমাদের অনেক কিছু শেখায়। প্রতিটি প্রাণী তাদের জীবন ধারণের জন্য এক একটি ভিন্ন পথ বেছে নেয়।
এই পথগুলো তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করে। ছোট প্রাণীদের এই লড়াই আমাদের প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী বিষয়ক গবেষণা ও প্রতিবেদন।