শিরোনাম: “অ্যাডোলেসেন্স”: নেটফ্লিক্সে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিরিজের নেপথ্যে, অনলাইনে হয়রানির শিকার নির্মাতারা।
সাম্প্রতিক সময়ে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত “অ্যাডোলেসেন্স” (Adolescence) সিরিজটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর, অনলাইনে ‘ইনসেল’ (incel) সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে, কিভাবে একটি ভয়ানক ঘটনা ঘটায়, সেই গল্প নিয়েই এই সিরিজের প্রেক্ষাপট।
তবে, পর্দার পেছনের গল্পটাও কম চাঞ্চল্যকর নয়। সিরিজটির নির্মাতা এবং এর সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীরা, জনসাধারণের অতিরিক্ত মনোযোগের শিকার হয়েছেন, যা তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলেছে।
সিরিজটির লেখক, জ্যাক থর্ন, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানান, সিরিজটি মুক্তি পাওয়ার পর তিনি অনলাইনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন। তার চেহারার গঠন থেকে শুরু করে তার হরমোনের মাত্রা নিয়েও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে। শুধু তিনিই নন, এই সিরিজের সঙ্গে জড়িত আরও অনেকে, তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং চলাফেরার উপর আসা এই অপ্রত্যাশিত মনোযোগে উদ্বিগ্ন।
এই ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে আরও কিছু আলোচিত ঘটনার। এর আগে “বেবি রেইনডিয়ার” (Baby Reindeer) এবং “মিস্টার বেটস ভার্সেস দ্য পোস্ট অফিস” (Mr Bates vs the Post Office) -এর মতো জনপ্রিয় সিরিজগুলো মুক্তির পরও, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা একই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ কেউ হয়রানির শিকার হয়েছেন, আবার কারো ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের ফলে, কোনো ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পরে এবং এর নেতিবাচক প্রভাবও বাড়ে। “অ্যাডোলেসেন্স”-এর মতো সংবেদনশীল বিষয়বস্তু, যা সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্য এবং তরুণদের মধ্যে অনলাইনে ঘৃণা প্রসারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেছে, তা দর্শকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশেও অনলাইন জগতে ঘৃণা এবং বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, ভুল তথ্য এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার বিস্তার ঘটছে। অনেক সময়, এই ধরনের প্রচারণার শিকার হয়ে অনেকে মানসিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
পশ্চিমা বিশ্বে ‘ইনসেল’ সংস্কৃতি একটি পরিচিত সমস্যা। এই সংস্কৃতিতে, পুরুষরা নারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তাদের প্রতি সহিংস হওয়ারও প্ররোচনা দেয়। আমাদের দেশে যদিও ‘ইনসেল’ সংস্কৃতি সরাসরি পরিচিত নয়, তবে অনলাইনে নারীদের প্রতি কটূক্তি, হয়রানি এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রায়ই দেখা যায়।
এই পরিস্থিতিতে, নির্মাতাদের সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যারা তরুণ এবং সংবেদনশীল, তাদের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন। সিরিজ নির্মাণের সময় যেমন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা হয়, তেমনি প্রচারের সময়ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
“অ্যাডোলেসেন্স”-এর ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দেয়, সমাজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করা শিল্পকর্মগুলো, প্রায়ই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। তাই, শুধুমাত্র ভালো গল্প বলার দিকে মনোযোগ না দিয়ে, এর সঙ্গে জড়িত সকলের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান