আতঙ্কের ছবি: কিশোরদের জীবন বাঁচাতে পারে নতুন সিরিয়াল?

তরুণ সমাজের অবক্ষয়: নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া নতুন সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’।

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর অপরাধ এবং তরুণ সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগ বেড়েছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। এই প্রেক্ষাপটে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া নতুন ব্রিটিশ টিভি সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

সমাজের এই গভীর ক্ষতগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে পরিচালক ফিলিপ বারান্তিনি-র জুড়ি মেলা ভার। স্টিফেন গ্রাহাম অভিনীত এই সিরিজে কিশোর অপরাধ, সামাজিক মাধ্যমের কুপ্রভাব এবং পুরুষতান্ত্রিকতার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শককে নাড়া দিয়ে যায়।

সিরিজটির গল্প আবর্তিত হয়েছে ১৩ বছর বয়সী জেমি নামের এক কিশোরকে কেন্দ্র করে, যে তার সহপাঠীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। ঘটনার তদন্তের পর উন্মোচিত হয় এক গভীর সত্য।

জামির পরিবার, বিশেষ করে তার বাবা-মা, তাদের সন্তানের এমন ভয়ঙ্কর কাজের পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো জানতে পারেন। সিরিজের প্রধান চরিত্রগুলোর শক্তিশালী অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

সিরিজে অভিনেতা অ্যাশলে ওয়াল্টার্স একজন তদন্ত কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি কিশোর অপরাধের গভীরতা অনুসন্ধান করেন। অন্যদিকে, এরিন ডোহের্টি একজন মনোবিদের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন।

এছাড়াও, ক্রিস্টিন ট্রেমারকো, ওয়েন কুপার, ফাতেমা বোজাং এবং অ্যামেলি পিসের অভিনয় দর্শককে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে।

‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর গল্প বলার ধরনও বেশ আকর্ষণীয়। প্রতিটি পর্ব ক্যামেরার একটানা শটে ধারণ করা হয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে এক ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করে।

দৃশ্যগুলো এত বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, দর্শক ঘটনার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন।

এই সিরিজে কিশোরদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। তাদের খাদ্য, পোশাক, বন্ধু-বান্ধব এবং অনলাইনে কাটানো সময়— সবকিছুই গল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অভিভাবকদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা, যেখানে সন্তানদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

সিরিজটি কিশোরদের মধ্যে বেড়ে ওঠা সহিংসতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খারাপ প্রভাব এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়। এটি সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, যা তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে।

সবশেষে, ‘অ্যাডোলেসেন্স’ শুধু একটি টিভি সিরিজ নয়, এটি সমাজের প্রতিচ্ছবি। যারা সমাজের এই দিকগুলো নিয়ে সচেতন, তাদের জন্য সিরিজটি দেখা অত্যন্ত জরুরি।

এটি দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলবে এবং আলোচনার জন্ম দেবে, যা হয়তো আমাদের সমাজকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *