সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যাডোলসেন্স’ নামের একটি নতুন সিরিজ যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সমাজের গভীরে প্রোথিত পুরুষতান্ত্রিকতার বিষাক্ত প্রভাব নিয়ে তৈরি এই সিরিজটি তরুণ প্রজন্মের উপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছে।
সিরিজটির বিষয়বস্তু, নির্মাণের কৌশল এবং এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সিরিজটির গল্প আবর্তিত হয়েছে ১৩ বছর বয়সী কিশোর জেমিকে ঘিরে। ঘটনাচক্রে, এক সহপাঠীকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, জেমির মানসিক অবস্থা, তার পরিবারের অসহায়ত্ব এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া, সবকিছুই এই সিরিজে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে জানা যায়, জেমির এই ভয়াবহ কাজের পেছনে ছিল অনলাইনে প্রচারিত বিদ্বেষপূর্ণ কিছু কনটেন্ট, যা তাকে নারীবিদ্বেষী করে তুলেছিল।
‘অ্যাডোলসেন্স’ -এর গল্প বলার ধরন বেশ আকর্ষণীয়। প্রতিটি পর্ব এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একটানা দৃশ্যায়িত করা হয়েছে, যেখানে কোনো কাটছাঁট বা সম্পাদনা নেই।
ক্যামেরার কারুকার্য দর্শকদের ঘটনার সাথে একাত্ম করে তোলে, যা এই সিরিজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সিরিজটি মুক্তির পর থেকেই যুক্তরাজ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং তরুণদের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে।
বিশেষ করে, “ম্যানোস্ফিয়ার” (পুরুষতান্ত্রিকতার একটি অনলাইন জগৎ) এবং “ইনসেল”-এর (অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্রহ্মচারী) মতো ধারণাগুলো কীভাবে তরুণদের মনে গেঁথে যাচ্ছে, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এই সিরিজ নিয়ে কথা বলছেন।
লেবার পার্টির এমপি অ্যানলিস মিডগলি মনে করেন, এই সিরিজটি পার্লামেন্ট ও স্কুলগুলোতে দেখানো উচিত, যাতে নারীবিদ্বেষ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা যায়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেইর স্টারমারও সিরিজটির প্রশংসা করেছেন এবং তাঁর নিজের কিশোর ছেলেমেয়ের সঙ্গে বসে এটি দেখার কথা জানিয়েছেন।
সাবেক ফুটবল কোচ স্যার গ্যারেথ সাউথগেট, এক টেলিভিশন ভাষণে সমাজের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারকারী কিছু ব্যক্তির (influencers) সমালোচনা করেছেন এবং পুরুষের জন্য ভালো রোল মডেল তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
সিরিজটির বিষয়বস্তু, নির্মাণশৈলী এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদেরও মন জয় করেছে।
মুক্তির প্রথম চার দিনেই এটি ২ কোটি ৪০ লক্ষ বারের বেশি দেখা হয়েছে, যা দর্শকপ্রিয়তার একটি বড় প্রমাণ।
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বের আরও ৭১টি দেশে নেটফ্লিক্সের শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই সিরিজ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ‘অ্যাডোলসেন্স’ শুধু একটি বিনোদনমূলক সিরিজ নয়, বরং এটি সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ঘৃণা ও সহিংসতার বিস্তার কীভাবে ঘটছে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান