আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষা: তালিবান শাসনের অন্ধকারে শিক্ষার আলো।
আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষা অর্জনের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে তালিবান সরকার। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে, মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে, মেয়ে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্নকে কেড়ে নিচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ মেয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তালিবান সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে, মেয়েদের জন্য শিক্ষার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদ্রাসাগুলো। বর্তমানে আফগানিস্তানে হাজার হাজার মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে মেয়েদের কোরআন শিক্ষা ও ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া হয়। তবে, সাধারণ শিক্ষার সুযোগ সীমিত হওয়ায় অনেক নারী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
এমন এক পরিস্থিতিতে, কয়েকজন সাহসী নারী গোপনে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন নার্গিস (ছদ্মনাম)। তিনি রাজধানী কাবুলে একটি গোপন স্কুলে মেয়েদের পড়ান। নার্গিস জানিয়েছেন, তালিবান শাসনের আগে তিনি উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই।
তিনি তার নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আশেপাশের মেয়ে শিশুদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সাহায্য করছেন। যদিও এই কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তালিবান কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়লে কঠোর শাস্তির সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও তিনি তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নার্গিসের মতো আরও অনেক নারী আছেন, যারা এই কঠিন সময়ে মেয়েদের শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন। তাদের এই সংগ্রাম আফগান নারীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক সাহায্যও কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা (ইউএসএআইডি) শিক্ষা বিষয়ক অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে নার্গিসের মতো অনেকের শিক্ষা লাভের সুযোগ আরও সীমিত হয়ে পড়েছে।
আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। মেয়ে শিশুদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে, একটি দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আফগান মেয়েরা আবার তাদের শিক্ষা জীবন শুরু করতে পারে এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।