যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে, যেখানে মায়েদের স্বাস্থ্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ, সেখানে একজন নিবেদিতপ্রাণ ধাত্রীর গল্প, যিনি প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুর্গম এলাকা, বাদাখশানে, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এক কঠিন কাজ।
এখানকার নারীদের সাক্ষরতার হার খুবই কম, ১০ শতাংশের নিচে, যা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আরও একটি বাধা।
এই প্রতিকূল পরিবেশে, একজন ধাত্রী, আনিসা, সেখানকার নারীদের জন্য জীবন বাঁচানোর দূত হিসাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন।
আফগানিস্তানে মাতৃমৃত্যুহার এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। এখানকার নারীরা স্বাস্থ্যসেবার অভাবে প্রায়ই গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হন। অনেক সময় সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
আনিসার মতো ধাত্রীরা প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে গিয়ে মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন এবং প্রসবকালীন সময়ে সহায়তা করতেন।
তাঁর কাজ শুধু স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং নারীদের মানসিক সমর্থন জোগানোও তাঁর দায়িত্বের অংশ ছিল।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর সহায়তায় গঠিত একটি ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য দলের সঙ্গে কাজ করতেন আনিসা। এই দল প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১৩টি গ্রামে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিত।
সেখানকার নারীরা, বিশেষ করে যারা স্বামীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে মনোমালিন্যে জর্জরিত ছিলেন, আনিসার কাছে তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো বলতে পারতেন। আনিসা তাঁদের কাউন্সেলিং করতেন এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন।
কিন্তু তালিবান ক্ষমতা দখলের পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যখাতে সংকট দেখা দেয়। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো বন্ধ হতে শুরু করে।
এর ফলস্বরূপ, আনিসার মতো স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কাজ হারাতে শুরু করেন। এমনকি, নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আনিসার কাজ হারানো এবং তাঁর এলাকার নারীদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া, সেখানকার মানুষের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়।
আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়ায়, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
আনিসা এখন কর্মহীন, এবং তাঁর এলাকার নারীরা আগের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাপানি আলোকচিত্রী নোরিকো হায়াশি, আনিসার এই কঠিন সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর তোলা ছবিগুলো, নারীদের প্রতি আনিসার নিবেদন এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার এক মর্মস্পর্শী প্রতিচ্ছবি।
হায়াশির মতে, একজন মানুষের জীবন বাঁচানোই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
আফগানিস্তানের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, আনিসার মতো স্বাস্থ্যকর্মীদের ত্যাগ ও নিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
তাঁদের কাজ, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা নারীদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান