আফগান ফুটবলে দুর্নীতির অভিযোগ, মুখ খুললেন সাবেক অধিনায়ক।
আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশন (এএফএফ)-এর কার্যকলাপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক ফুটবল দলের অধিনায়ক জোহাইব ইসলাম আমিরি। তার অভিযোগ, ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ কারগারের নেতৃত্বে ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা চলছে, যার কারণে দেশটির ফুটবলের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।
জানুয়ারিতে দীর্ঘ বিরতির পর আমিরি যখন আবার আফগানিস্তানে খেলতে ফিরে আসেন, তখন তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার আশা ছিল তার। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তিনি দেখেন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে।
আমিরি ২০০৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক করেন এবং এক দশকের বেশি সময় ধরে দলের অধিনায়ক ছিলেন।
খেলোয়াড় জীবনে আমিরি ২০১১ সালে মুম্বাইয়ে যোগ দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রথম নজির স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর অনুষ্ঠিত আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আবু মুসলিমের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কিন্তু ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে বিতর্কিত ৮-০ গোলের জয়ের পর আমিরি হতাশ হয়ে পড়েন এবং খেলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আমিরির প্রধান অভিযোগ, এএফএফ সভাপতি মোহাম্মদ কারগার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করছেন, তৃণমূল পর্যায়ে কোনো কাজ করছেন না। কারগারের বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
আফগানিস্তানের সাবেক কোচ ও খেলোয়াড় কারগার ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তার পূর্বসূরি কেরামুদ্দিন করিমকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ফিফা আজীবন নিষিদ্ধ করে।
কারগারের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে ফেডারেশনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের ফুটবল উন্নয়নে ব্যয় করার কথা ছিল।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ২০২৪ সালের শুরুতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে খেলার আগে ২১ জন খেলোয়াড় ধর্মঘট করেন। এই ম্যাচগুলোতে আফগানিস্তান দল উল্লেখযোগ্যভাবে পরাজিত হয়।
জানা যায়, সেই সময় দলের কোচ ছিলেন অ্যাশলে ওয়েস্টউড। আমিরি অভিযোগ করেন, কাতার ও কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর খেলোয়াড়দের বোনাস হিসেবে যে অর্থ দেওয়ার কথা ছিল, তা তাদের দেওয়া হয়নি।
খেলোয়াড়দের অভিযোগ, কর্মকর্তাদের বেতনও গত তিন বছর ধরে পরিশোধ করা হয়নি। ফিফা তাদের ফরওয়ার্ড প্রোগ্রামের তহবিল সরবরাহ করতে পারছে না, কারণ তালেবান সরকারের কারণে ব্যাংকিং সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, গত তিন বছর ধরে তালেবান ফেডারেশনের কার্যকলাপে গভীর মনোযোগ রাখছে। এমনকি তাদের নির্দেশ না মানার কারণে প্রাদেশিক ফেডারেশন প্রধানদেরও বরখাস্ত করা হয়েছে।
আমিরি ফিফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কারগারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং নতুন নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে। তার মতে, কারগার তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছেন।
আমিরি মনে করেন, দেশের ফুটবলের উন্নয়নে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আফগান ফুটবল ফেডারেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
