যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বীমা কোম্পানি Aflac-এর সিস্টেমে হানা দিয়েছে সাইবার অপরাধীরা। সম্প্রতি জানা গেছে, এই হ্যাকিংয়ের ফলে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন—সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য এবং বীমার দাবির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চুরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ ঘটনা বীমা শিল্পকে লক্ষ্য করে চালানো ধারাবাহিক সাইবার হামলারই অংশ।
আফলাক-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহে তারা এই অনুপ্রবেশ শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। তবে, হ্যাকাররা গ্রাহকদের কত তথ্য হাতিয়ে নিতে পেরেছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকদের পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে।
আফলাক-এর বার্ষিক রাজস্ব কয়েক বিলিয়ন ডলার এবং কয়েক কোটি গ্রাহক রয়েছে। ফলে, এই সাইবার হামলা যুক্তরাষ্ট্রের বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর চালানো ডিজিটাল আক্রমণের একটি বড় উদাহরণ।
এর আগে, ‘এরি ইন্স্যুরেন্স’ এবং ‘ফিলাডেলফিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’ও হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই হামলার পেছনে ‘স্ক্যাটার্ড স্পাইডার’ নামের একটি কুখ্যাত সাইবার অপরাধী দল জড়িত।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দলটি খুবই দ্রুত আক্রমণ চালাতে পারদর্শী। তারা সাধারণত ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেয়।
অর্থাৎ, তারা ভুয়া পরিচয়ে ফোন করে বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সাইবার হামলার হাত থেকে বাঁচতে হলে কর্মীদের সচেতন করতে হবে এবং সন্দেহজনক ফোন কল ও ইমেইল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়াও, নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শদাতা সিনথিয়া কাইজার, যিনি আগে এফবিআই-এর সাইবার বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালক ছিলেন, তিনি বলেছেন, “যদি আপনার শিল্প ‘স্ক্যাটার্ড স্পাইডার’-এর নিশানায় থাকে, তবে দ্রুত সাহায্য নিন।
কারণ, তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের পুরো আক্রমণটি সম্পন্ন করতে পারে।”
আফলাক-এর ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাইবার নিরাপত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের কোম্পানি এবং সাধারণ মানুষেরও এই বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কারণ, সাইবার হামলা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এর প্রভাব যেকোনো দেশের মানুষের ওপর পড়তে পারে।
আমাদের দেশেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে হবে।
একইসঙ্গে, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহজনক কোনো কিছু নজরে এলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন