আফ্রিকা: ওয়াগনারের বিদায়, রাশিয়ার নতুন খেলায় উদ্বেগে বিশ্ব!

আফ্রিকা মহাদেশে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার কৌশলগত পরিবর্তন: ওয়াগনারের বদলে আসছে ‘আফ্রিকা কোর’।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতির ধরনে পরিবর্তন আসছে। কুখ্যাত ভাড়াটে সৈন্য সরবরাহকারী ওয়াগনার গ্রুপের পরিবর্তে এবার সেখানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে সরাসরি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ‘আফ্রিকা কোর’।

খবর অনুযায়ী, ওয়াগনার এখন ধীরে ধীরে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে এবং তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে ‘আফ্রিকা কোর’।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া সম্ভবত তাদের সামরিক কার্যক্রমের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ওয়াগনারের বিতর্কিত অতীত এবং বিদ্রোহের কারণে সৃষ্ট দুর্বলতা থেকে বেরিয়ে এসে, রাশিয়া এখন একটি সুসংগঠিত এবং সরকারি কাঠামোর অধীনে তাদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চাইছে।

অতীতে, ওয়াগনার গ্রুপ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে সাহেল অঞ্চলে সক্রিয় ছিল। সেনেগাল থেকে সুদান পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায় সামরিক অভ্যুত্থান, সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য।

ওয়াগনার এসব অঞ্চলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় সামরিক বাহিনীর সাথে কাজ করেছে। তবে, তাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নিপীড়নের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।

২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক সম্মেলনে ঘোষণা করেন, রাশিয়া ৪০টিরও বেশি আফ্রিকান দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেছে এবং তাদের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া, পশ্চিমা দেশগুলোর অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে, যখন পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ব্যস্ত, তখন রাশিয়া সাহেল অঞ্চলে নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে।

মালির মতো কিছু অঞ্চলে, ওয়াগনার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাদের বেশ কিছু সৈন্য হতাহত হয়।

জানা যায়, ওয়াগনার এখন ধীরে ধীরে মালি এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (CAR) থেকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে, ‘আফ্রিকা কোর’-এর কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই বাহিনী মূলত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অভিজাত সৈন্যদের নিয়ে গঠিত।

তাদের প্রধান কাজ হবে মালির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা। এছাড়াও, তারা নাইজার এবং বুরকিনা ফাসোর মতো দেশগুলোতেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওয়াগনারের পরিবর্তে ‘আফ্রিকা কোর’-এর আগমন রাশিয়ার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে রাশিয়া একদিকে যেমন ভাড়াটে সৈন্যের তকমা থেকে মুক্তি পাবে, তেমনি সামরিক কার্যক্রমের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণও বাড়বে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক মহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবং আইনি ঝুঁকি কমাতে এটি সাহায্য করবে।

তবে, ওয়াগনারের কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ওয়াগনার এবং মালির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে, সাহেল অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন, সাহেলের নিরাপত্তা সমস্যাগুলো স্থানীয় সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

আফ্রিকার এই পরিবর্তনগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে এর প্রভাব কেমন হবে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *