আফ্রিকার প্রথম ‘এআই ফ্যাক্টরি’: ডিজিটাল বিশ্বে নতুন দিগন্তের সূচনা?
উগান্ডা এবং রুয়ান্ডার সীমান্তবর্তী একটি শহর কিগালি। আফ্রিকার এই শহরেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘গ্লোবাল এআই সামিট’। এই সম্মেলনের মূল আকর্ষণ হলো, মহাদেশটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর প্রসারের লক্ষ্যে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ।
এরই মধ্যে খবর এসেছে, জিম্বাবুয়ের টেলিযোগাযোগ বিলিয়নেয়ার স্ট্রাইভ মাসিয়িওয়া’র প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কাসাভা টেকনোলজিস, এনভিদিয়া’র সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করতে যাচ্ছে আফ্রিকার প্রথম ‘এআই ফ্যাক্টরি’।
আফ্রিকা মহাদেশে এখনো পর্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা সেভাবে পৌঁছায়নি। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রয়োজনীয় কম্পিউটার শক্তির অভাব।
জানা গেছে, আফ্রিকার মাত্র ৫ শতাংশ এআই বিশেষজ্ঞ গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং পাওয়ার পান। এই পরিস্থিতিতে, উন্নত গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) সমৃদ্ধ সুপার কম্পিউটার সরবরাহ করা হলে, তা এআই খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।
সাধারণত, উন্নত দেশগুলোতে এই ধরনের সুপার কম্পিউটার তৈরি করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নত জিপিইউ-এর সহজলভ্যতা এই মহাদেশে এআই বিপ্লবকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে কাসাভার ডেটা সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে, স্থানীয় ব্যবসা এবং গবেষকরা এআই তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং শক্তি পাবেন।
এর ফলে আফ্রিকার উদ্ভাবকরাও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারবেন।
এই ‘এআই ফ্যাক্টরি’ তৈরি হওয়ায় আফ্রিকার স্টার্টআপ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধুনিক এআই অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এর ফলে তারা তাদের ধারণাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে।
এখানে উল্লেখ্য, এনভিদিয়ার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা ওপেনএআই, টেসলা, মেটা, গুগল-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা ব্যবহার করে।
আফ্রিকার দেশগুলোতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হলো হার্ডওয়্যারের উচ্চ মূল্য।
উন্নত জিপিইউ-এর দাম অনেক বেশি, যা আফ্রিকার মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। উদাহরণস্বরূপ, কেনিয়ার একজন মানুষের জন্য একটি জিপিইউ কেনা জার্মানির তুলনায় ৩১ গুণ বেশি ব্যয়বহুল।
এমন পরিস্থিতিতে, স্থানীয় ডেটা সেন্টার তৈরি হলে, তা এআই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই পদক্ষেপের ফলে, স্থানীয় এআই ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে এবং স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও আর্থিক পরিষেবা সহ বিভিন্ন শিল্পে উদ্ভাবন বাড়বে।
একই সাথে, এআই প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা তৈরিতেও এটি সাহায্য করবে। বর্তমানে, আফ্রিকার ভাষা ও উপভাষাগুলো ডেটার অভাবে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয় না।
নতুন এই পদক্ষেপের ফলে, স্থানীয় ডেটা ব্যবহার করে মডেল তৈরি করা সম্ভব হবে, যা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জন্য উপযুক্ত হবে।
তবে, এই ফ্যাক্টরি তৈরি এবং পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
আফ্রিকার বিদ্যুতের দুর্বল অবকাঠামো একটি বড় সমস্যা। এছাড়াও, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সীমিত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে এআই মডেলগুলো সহজে ব্যবহার করা কঠিন হতে পারে।
সবকিছু বিবেচনা করে, কাসাভার এই উদ্যোগকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আফ্রিকার প্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে অন্যদেরও এই খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা হবে।
এটি নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বিশ্বে আফ্রিকার জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন