আফ্রিকার অর্থনীতি: জ্বালানি সংকট এক নম্বর সমস্যা, বলছে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA)
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA)-এর প্রধান ড. ফাতিহ বিরোল বলেছেন, আফ্রিকার অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জ্বালানির অভাব। সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রায় ৬০ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, যা উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা।
শিল্প ও কৃষির উন্নতিতে যেমন এটি প্রভাব ফেলে, তেমনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটি উদ্বেগের কারণ। পর্যাপ্ত আলোর অভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে না, টিকার সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে, এবং রান্নার জন্য উন্নত প্রযুক্তির অভাবের কারণে বায়ু দূষণ বাড়ে, যা প্রতি বছর সাত লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়।
ড. বিরোল আরও জানান, আফ্রিকার জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, যদিও বিশ্ব ব্যাংক এবং আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকের ‘মিশন ৩০০’ এর মতো কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ছয় বছরে ৩০০ মিলিয়ন মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আফ্রিকার জ্বালানি খাতে বর্তমানে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।
তবে নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে হলে, এই বিনিয়োগ অন্তত তিনগুণ বাড়িয়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
আফ্রিকা মহাদেশে তেল, গ্যাস, সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ-এর মতো প্রচুর জ্বালানি সম্পদের ভাণ্ডার রয়েছে। কিন্তু একই সাথে, শক্তির ব্যবহারেও পিছিয়ে আছে এই মহাদেশ।
প্রতি দু’জনের মধ্যে একজনের বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এছাড়া, প্রতি পাঁচ পরিবারের মধ্যে চার পরিবার রান্নার জন্য সরাসরি আগুন ব্যবহার করে। ড. বিরোলের মতে, জ্বালানির অভাব আফ্রিকার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা।
বর্তমানে আফ্রিকার জ্বালানি মিশ্রণে কয়লার অংশ ১৩ শতাংশ, তেলের ২৬ শতাংশ, গ্যাসের ১৮ শতাংশ এবং জৈব জ্বালানির পরিমাণ ৪০ শতাংশ। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার খুবই কম।
এক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারগুলোর উচিত বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি কমানো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে বুঝতে পারে যে, আফ্রিকার জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করলে তারা ভালো রিটার্ন পাবে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আফ্রিকার অবদান খুবই সামান্য, যা বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবগুলো সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় এই মহাদেশে।
ভবিষ্যতে বিদ্যুতায়নের জন্য সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ-এর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। শিল্পায়নের জন্য শুধু বিদ্যুতায়নই যথেষ্ট নয়, অন্যান্য জ্বালানি উৎসেরও প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে আফ্রিকার উচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানো। এছাড়াও সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ এবং কিছু দেশে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
আফ্রিকা মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (African Continental Free Trade Area) গঠনের ধারণাটি খুবই ভালো। এর মাধ্যমে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো গেলে অনেক প্রকল্পের খরচ কমানো এবং শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস করা সম্ভব হবে।
এটি আফ্রিকার বিনিয়োগের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। ড. বিরোল মনে করেন, আফ্রিকার অনেক সরকার এখন বুঝতে পারছে যে, জ্বালানি সমস্যার সমাধান না হলে তারা তাদের নাগরিকদের সমৃদ্ধ করতে পারবে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন