শিরোনাম: মানচিত্রের রাজনীতি: বিশ্বের সঠিক চিত্র কেমন হওয়া উচিত?
পৃথিবীর মানচিত্র, যা আমরা দিনের পর দিন দেখি, তা কি সত্যিই পৃথিবীকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একদল মানুষ বর্তমানে বিশ্ব মানচিত্রের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
তাদের মূল অভিযোগ, বহুল ব্যবহৃত ‘মারকেটর প্রজেকশন’ নামক মানচিত্রটিতে আফ্রিকা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ছোট করে দেখানো হয়, যেখানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় দেখায়।
আফ্রিকা ‘নো ফিল্টার’-এর প্রধান, আবিম্বোলা ওগুন্দাইরোর নেতৃত্বে একটি দল এই ত্রুটিপূর্ণ মানচিত্র পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের মূল দাবি, স্কুল এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘ইকুয়াল আর্থ’ অথবা ‘গ্যাল-পিটার্স’ এর মতো সমান ক্ষেত্রফলযুক্ত মানচিত্র ব্যবহার করা হোক।
এই মানচিত্রগুলোতে অঞ্চলের সঠিক আকার ও আনুপাতিক চিত্র বজায় থাকে।
মারকেটর মানচিত্রটি ১৫৯৯ সালে ফ্লেমিশ কার্টোগ্রাফার জেরার্ডাস মার্কেটর তৈরি করেন। এটি বিশেষভাবে সমুদ্রযাত্রার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, যেখানে সরল রেখায় দিক নির্ণয় করা সহজ ছিল।
কিন্তু এই মানচিত্রে আকার এবং দূরত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিনল্যান্ডকে আফ্রিকার আকারের কাছাকাছি দেখানো হয়, যদিও বাস্তবে আফ্রিকা মহাদেশে গ্রিনল্যান্ডকে ১৪ বারের বেশি রাখা সম্ভব।
আবার, ইউরোপকে দক্ষিণ আমেরিকার চেয়ে বড় দেখানো হলেও, প্রকৃত অর্থে দক্ষিণ আমেরিকার অর্ধেক হলো ইউরোপ।
ওগুন্দাইরোর মতে, এই ধরনের মানচিত্রের ভুল উপস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিকার প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। তিনি মনে করেন, “যেখানে আকারের সঙ্গে ক্ষমতার তুলনা করা হয়, সেখানে এই মানচিত্র আফ্রিকা সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়।”
এই পরিবর্তনের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ত্রিমাত্রিক পৃথিবীকে দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠে সঠিকভাবে দেখানো কঠিন।
বিভিন্ন ধরনের মানচিত্র উপস্থাপনে ক্ষেত্রফল, আকার অথবা দূরত্বের কোনো না কোনোটির পরিবর্তন ঘটতেই পারে।
জার্মান অ্যাক্টিভিস্ট আর্নো পিটার্স ১৯৭৩ সালে ‘পিটার্স প্রজেকশন’ তৈরি করেন, যা সমান ক্ষেত্রফলযুক্ত মানচিত্রের একটি উদাহরণ। যদিও এই মানচিত্রটিও কিছু সমালোচনার শিকার হয়েছে, কারণ এতে নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকাগুলো সামান্য প্রসারিত দেখায়।
সাম্প্রতিক সময়ে, বোস্টন পাবলিক স্কুল-সহ বিভিন্ন স্থানে এই বিতর্কের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এমনকি নাসা এবং বিশ্ব ব্যাংকও তাদের মানচিত্র উপস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে।
বিশ্ব ব্যাংক বর্তমানে ‘ইকুয়াল আর্থ’ মানচিত্র ব্যবহার করে।
আবিম্বোলা ওগুন্দাইরোর মতে, এই পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে হলেও ইতিবাচক। তিনি মনে করেন, “আফ্রিকার মানুষদের তাদের নিজেদের গল্প বলার জন্য এগিয়ে আসা উচিত, অন্যথায় সেই কাজটি অন্য কেউ করবে।
মানচিত্রে নিজেদের সঠিক চিত্র তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা