চুক্তি বাতিল হলে: চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে, হতাশায় আফ্রিকা!

আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি: অনিশ্চয়তার মেঘ, কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ।

আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি, যা আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে, তার ভবিষ্যৎ এখন গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

চুক্তিটি নবায়ন না করা হলে, আশঙ্কা করা হচ্ছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

আফ্রিকার শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এই চুক্তির ফলে কর্মসংস্থান হারানোর পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলোতে নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন ও শোষণের মতো ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। লেসোথোর একটি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোলোং সেনোহে জানিয়েছেন, “অনেক নারী মনে করেন তাদের আর কোনো উপায় নেই। এই চুক্তি বাতিল হয়ে গেলে তাদের সামনে আরও কম সুযোগ থাকবে।”

অন্যদিকে, অনেক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই চুক্তির সমাপ্তি আফ্রিকার দেশগুলোকে অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে উৎসাহিত করবে। বিশেষ করে চীন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এছাড়া, আফ্রিকার দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারে, যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।

এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যদিও এক বছরের জন্য চুক্তিটি বহাল রাখার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে কেনিয়া, লেসোথো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার, প্রস্তুত হচ্ছে এই অনিশ্চয়তার মোকাবিলা করার জন্য।

তারা হয় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে, না হয় বিকল্প বাণিজ্য চুক্তির দিকে ঝুঁকছে।

কেনিয়া সরকার ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা শুরু করেছে। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো আশা করছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে এই চুক্তি সম্পন্ন হবে।

উল্লেখ্য, কেনিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ২০০০ সালে ছিল প্রায় ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭0 মিলিয়ন ডলারে।

এই বাণিজ্য চুক্তির ফলে কেনিয়ার পোশাক ও উদ্যানপালন শিল্প বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে।

আফ্রিকার দেশগুলো তাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য এই ধরনের বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই চুক্তি শুধু একটি বাণিজ্য চুক্তি নয়, বরং এটি কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি।”

এই পরিস্থিতিতে, আফ্রিকার দেশগুলো তাদের অর্থনীতির সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। তারা একদিকে যেমন বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চেষ্টা করছে, তেমনি নতুন বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে।

এছাড়া, তারা নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফ্রিকার দেশগুলোকে এখন এমনভাবে বাণিজ্য করতে হবে, যাতে তারা শুধু কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেই পরিচিত না থাকে, বরং পণ্য প্রস্তুতকারক দেশে পরিণত হতে পারে এবং নিজেদের সম্পদ থেকে বেশি লাভবান হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *