অবনতির পথে আফ্রিকার পেঙ্গুইন, বাঁচাতে কি পদক্ষেপ?

আফ্রিকার একটি বিপন্নপ্রায় প্রজাতির পেঙ্গুইন বাঁচাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় মৎস্য শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে হওয়া এক চুক্তির ফলে, এই পেঙ্গুইনদের প্রজনন কেন্দ্রগুলির আশেপাশে মাছ ধরা বন্ধ করা হবে।

এই পদক্ষেপের ফলে প্রাণীটির বিলুপ্তি কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। আফ্রিকার এই পেঙ্গুইন প্রজাতিটি বর্তমানে চরমভাবে বিপন্ন।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে যেখানে প্রায় ১০ লক্ষ পেঙ্গুইন ছিল, সেখানে বর্তমানে এদের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। প্রতি বছর প্রায় ৭.৯ শতাংশ হারে এদের সংখ্যা কমছে, যা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ।

এমন চলতে থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে এই প্রজাতিটি হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত রবেন দ্বীপ, যেখানে এক সময় নেলসন ম্যান্ডেলাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, সেখানকার পেঙ্গুইন কলোনির আশেপাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া, পোর্ট এলিজাবেথ নামে পরিচিত গ্কেবারহার কাছে অবস্থিত বার্ড আইল্যান্ডেও একই রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আরও চারটি কলোনির আশেপাশে মাছ ধরার উপর সীমিত আকারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পেঙ্গুইনদের খাদ্য হিসেবে সার্ডিন ও অ্যাঙ্কোভি মাছ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে এই দুটি মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পেঙ্গুইনদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

এর ফলে তাদের প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। মৎস্য শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা সেই সংকট সমাধানে সহায়তা করবে।

তবে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শুধুমাত্র মৎস্য শিকার বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমির উপর শিকারি প্রাণী এবং শব্দ দূষণ-এর মতো আরও অনেক কারণ রয়েছে, যা পেঙ্গুইনদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে।

এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। এই চুক্তির ফলে মৎস্য ব্যবসায়ীরাও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, পেঙ্গুইনের সংখ্যা হ্রাসের জন্য শুধুমাত্র মৎস্য শিল্পকে দায়ী করা সঠিক নয়। এই চুক্তির মাধ্যমে তারা ক্ষতিগ্রস্ত পেঙ্গুইন প্রজাতিটিকে বাঁচাতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গবেষণা করার সুযোগ পাবেন এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন।

এই চুক্তি প্রমাণ করে যে, পরিবেশ রক্ষার জন্য শিল্প ও সংরক্ষণবাদীরা একত্রিত হয়ে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা পেঙ্গুইনদের রক্ষা করতে এবং আমাদের জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে পারব, একইসাথে মৎস্য শিল্পেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ মন্ত্রী ডিয়ন জর্জ

এই চুক্তির মেয়াদ ১০ বছর। ছয় বছর পর এর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা হবে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *