ইউরোপে যেতে চাওয়া আফ্রিকানদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতি, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা?
গত বছর, ইউরোপের শেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে (Schengen Area) ভিসা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন বহু আফ্রিকান নাগরিক। এর ফলস্বরূপ, শুধুমাত্র ভিসা আবেদন ফি বাবদ তাদের প্রায় ৭ কোটি মার্কিন ডলার (Bangladeshi Taka – ৮০০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে, যা ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং এর সঙ্গে জড়িত আর্থিক বিষয়গুলো নতুন করে সামনে এনেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়।
জানা যায়, ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যয়বহুল। প্রত্যেক আবেদনকারীকে ভিসা ফি হিসেবে প্রায় ৯০ ইউরো (১০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১,৭০০ টাকার সমান) পরিশোধ করতে হয়।
একবার ভিসা প্রত্যাখ্যান হলে এই ফি ফেরত পাওয়া যায় না।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ল্যাগো কালেক্টিভ’-এর (LAGO Collective) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো।
উদাহরণস্বরূপ, নাইজেরিয়া, ঘানা ও সেনেগালের মতো দেশগুলোতে ভিসা প্রত্যাখানের হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
এর মানে হলো, এই দেশগুলোর অনেক নাগরিক ইউরোপে ভ্রমণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সেই সঙ্গে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে অনেক সময় আবেদনকারীদের ‘উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপযুক্ত প্রমাণ’ দাখিল করতে না পারার কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও, আবেদনকারীর আর্থিক সঙ্গতি এবং নিজ দেশে ফিরে আসার মতো যথেষ্ট কারণ আছে কিনা, সেটিও বিবেচনা করা হয়।
আফ্রিকার নাগরিকদের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
ক্যামেরুনের (Cameroon) একজন নাগরিক জ্যাঁ এমবুলের (Jean Mboulé) ঘটনা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
তিনি জানান, ফ্রান্সে (France) বসবাস করা সত্ত্বেও তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়, যদিও তার স্ত্রীর আবেদন গৃহীত হয়েছিল।
এমবুলের মতে, দূতাবাস (embassy) তার কাগজপত্রকে ‘ভুয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
পরে অবশ্য তিনি আইনি লড়াইয়ে জয়ী হন এবং ক্ষতিপূরণ পান।
এই ঘটনার মতো অনেক ক্ষেত্রেই ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর প্রতিকারের উপায় পাওয়া কঠিন।
অনেক আবেদনকারী, বিশেষ করে যারা একবার ভিসা পাননি, তারা দ্বিতীয়বার আবেদন করতেও দ্বিধা বোধ করেন।
কারণ, এতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিসা প্রক্রিয়ার এই জটিলতা এবং প্রত্যাখ্যানের কারণে দরিদ্র দেশগুলোর নাগরিকদের অর্থ, ধনী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে, যা এক ধরনের ‘বিপরীত রেমিট্যান্স’-এর (reverse remittance) মতো।
আফ্রিকার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
গত বছর, যুক্তরাজ্যের ভিসা ফি বেড়েছিল এবং এর ফলে প্রত্যাখ্যান হওয়া ভিসাগুলোর জন্য আফ্রিকান আবেদনকারীদের প্রায় ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার বেশি খরচ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যও ভিসা পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে শিক্ষা, ব্যবসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চান এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি এবং আর্থিক বিষয়গুলো অনেক সময় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
তাই, আফ্রিকার নাগরিকদের ভিসা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার দিকে তাকালে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যেও কিছু শিক্ষা থাকতে পারে।
ভিসা আবেদনের সময় প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়া এবং কর্তৃপক্ষের নিয়মকানুন মেনে চলা বিশেষভাবে জরুরি।
তথ্য সূত্র: CNN