মেটা’র বিরুদ্ধে লড়াই: আফ্রিকার শ্রমিকদের সাহসী পদক্ষেপ, বিশ্বজুড়ে আলোচনা!

Kenyan lawyer, Mercy Mutemi (seated 4th R) along with fellow counsel follow proceedings during a virtual pre-trial consultation with a judge and Meta's legal counsel when she appeared in labour court on behalf of 43 former content moderators for Facebook who filed a complaint in Kenya against Meta, Facebook's parent company, for alleged illegal dismissal in the capital , Nairobi, on April 12, 2023. 260 content moderators working at Facebook's moderation center in Nairobi were fired by Sama, the outsourcing company that has been running the office since 2019 in a move by Meta, which also includes Instagram and WhatsApp, to reduce its workforce by nearly 25% in less than six months. (Photo by Tony KARUMBA / AFP)

ফেসবুক-এর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ক্ষতিকর বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে কাজ করা কর্মীরা প্রায়ই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার শিকার হন। সম্প্রতি কেনিয়ার আদালতে মেটা’র (ফেসবুকের মূল কোম্পানি) বিরুদ্ধে একটি মামলার শুনানিতে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

মূলত, বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের (content moderation) কাজ করতে গিয়ে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে, আফ্রিকার কর্মীদের এই লড়াইয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে (Nairobi) ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মেটা’র বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের কাজ করা কর্মীদের একটি দল এই মামলাটি দায়ের করেছেন। তাদের অভিযোগ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে আপত্তিকর বিষয়বস্তু যেমন সহিংসতা, ঘৃণা অথবা বিদ্বেষমূলক পোস্টগুলো তারা নিয়মিত দেখতে বাধ্য হয়েছেন।

এই ধরনের বিষয়বস্তু দেখতে দেখতে তাদের অনেকের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, এই কর্মীদের অনেকেই গভীর মানসিক আঘাত (PTSD), উদ্বেগ ও হতাশায় ভুগছেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের কাজটি মূলত “সামা” (Sama) নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে করানো হতো। কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রথমে তাদের অন্য ধরনের কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে তাদের বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের কাজে নিয়োগ করা হয়।

মেটা অবশ্য কর্মীদের সঙ্গে তাদের সরাসরি সম্পর্ক অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, “সামা” ছিল তাদের কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, তাই কর্মীদের সব দায়-দায়িত্ব “সামা”র।

তবে, কেনিয়ার আদালত বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছে। আদালত মনে করে, মেটা কর্মীদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে দায়বদ্ধ। গত সেপ্টেম্বরে আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানায়, কর্মীরা তাদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

এই রায়ের ফলে, মেটা’র বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টি আরও একধাপ এগিয়েছে।

বিষয়টি শুধু কেনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই মামলার সূত্রে, বিভিন্ন দেশে কর্মরত বিষয়বস্তু নিরীক্ষকদের অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, উন্নত দেশগুলোতেও এই ধরনের কর্মীরা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।

আফ্রিকার দেশগুলোতে, বিশেষ করে সাবেক উপনিবেশগুলোতে, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেনিয়ার সংবিধানও মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তাই, আদালতের এই রায় সেখানকার কর্মীদের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই মামলার রায় অন্যান্য দেশে কর্মরত প্রযুক্তি কর্মীদেরও তাদের অধিকার আদায়ের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

মেটা’র পক্ষ থেকে অবশ্য এই মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা চলছে। তারা বিভিন্নভাবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পক্ষে রায় নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি, মেটা’র একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, যিনি একসময় ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতে এমন মামলা যেন আর দায়ের করা না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।

তবে, বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের কর্মীদের এই লড়াই শুধু তাদের অধিকারের বিষয় নয়, বরং সামাজিক মাধ্যমগুলোর দায়িত্ব এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। এই মামলার রায় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *