একটি খামার এবং শহরতলির জীবন—এই দুইয়ের মিশেলে তৈরি হয়েছে ‘এগ্রিটোপিয়া’। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের গিলবার্ট শহরে গড়ে ওঠা এই আবাসিক এলাকাটি এখন বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
মূলত, এটি এমন একটি এলাকা যেখানে একটি কার্যকরী অর্গানিক খামারকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর ও অন্যান্য সুবিধা তৈরি করা হয়েছে।
এগ্রিটোপিয়ার ধারণাটি এসেছে জো জনস্টন নামের একজনের মাথা থেকে। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে, জনস্টন বুঝতে পারছিলেন যে, দ্রুত নগরায়নের ফলে তাদের পারিবারিক খামারের জায়গাটি হয়তো অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।
তাই তিনি জমি বিক্রি না করে, সেখানে একটি ভিন্ন ধরনের আবাসিক এলাকা তৈরির পরিকল্পনা করেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি জায়গা তৈরি করা, যেখানে মানুষজন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারবে এবং একটি শক্তিশালী কমিউনিটি তৈরি হবে।
১১ একর (প্রায় ৪.৫ হেক্টর) জমির উপর গড়ে ওঠা এগ্রিটোপিয়ায় রয়েছে একটি বিশাল অর্গানিক খামার। এই খামারে উৎপাদিত হয় নানা ধরনের সবজি ও ফল।
এখানকার বাসিন্দারা চাইলে তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য খামার থেকে সরাসরি ফল ও সবজি কিনতে পারেন। এছাড়াও, তারা চাইলে খামারের কিছু অংশ ভাড়া নিয়ে সেখানে নিজেদের পছন্দের গাছ লাগাতে পারেন।
এগ্রিটোপিয়ার অন্যতম আকর্ষণ হলো এর কমিউনিটি ব্যবস্থা। এখানে শিশুদের খেলাধুলার জন্য খেলার মাঠ এবং সবুজ স্থান রয়েছে। এছাড়া, এখানকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মিলিত হন, যা তাদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে।
এমনকি, এখানে ‘কিড পড’ নামে পরিচিত একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে কয়েকটি পরিবারের শিশুরা একসঙ্গে খেলাধুলা করে এবং তাদের অভিভাবকরা একে অপরের প্রতি খেয়াল রাখেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগ্রিটোপিয়ার মতো ‘এগ্রিহুড’ ধারণাটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এর কারণ হলো, মানুষ এখন সুস্থ জীবন যাপন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চায়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন রাজ্যে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে। এই ধরনের প্রকল্পগুলো একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষায়ও সাহায্য করে।
তবে, সমালোচকদের মতে, এগ্রিহুড প্রকল্পগুলো মূলত উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য তৈরি করা হয়। কারণ, জমির দাম বেশি হওয়ায় দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে এখানে বসবাস করা কঠিন।
বাংলাদেশেও কি এমন ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব? আমাদের দেশেও কৃষিকাজের সঙ্গে আবাসনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। গ্রামের অনেক বাড়িতেই বাড়ির পাশে ছোট আকারের বাগান দেখা যায়।
এছাড়া, শহরেও এখন ছাদ বাগান করার প্রবণতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে, হয়তো বাংলাদেশেও এ ধরনের সমন্বিত কৃষি ও আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে, যা শহর ও গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।