নিউ অরলিন্সের এক হতদরিদ্র সঙ্গীতশিল্পীর আবেগঘন পরিবেশনার সাক্ষী থাকল ‘আমেরিকা’স গট ট্যালেন্ট’ (এজিটি)-এর মঞ্চ। অনুষ্ঠানটিতে বিচারকদের মন জয় করে সরাসরি ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছেন জুরদান ব্লু নামের এক প্রতিযোগী। তার সঙ্গীত জীবনের গল্প শুনে আবেগাপ্লুত হন বিচারকরা, আর তাদের দেওয়া গোল্ডেন বাজারে যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে তার জীবনে।
গত মঙ্গলবার, ২৭শে মে, এজিটি-র কুড়ি সিজনের প্রথম পর্ব সম্প্রচারিত হয়। বিচারকদের আসনে ছিলেন হাউই ম্যান্ডেল, সাইমন কাউয়েল সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে ছিল জাদু, নাচ এবং সঙ্গীতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
তবে সবার নজর কেড়েছিলেন জুরদান ব্লু।
জুরদান ব্লু, যিনি পেশায় একজন পথশিল্পী, নিউ অরলিন্সের রাস্তায় গান গেয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, তার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার কাঁধে। ছেলেকে মানুষ করা এবং ভালোবাসার মানুষটির পাশে থাকার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন।
এক সাক্ষাৎকারে জুরদান জানান, ছেলেকে মানুষ করার পথে তিনি অনেক নতুন জিনিস শিখেছেন।
ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই যেন জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার সাহস খুঁজে পান তিনি। যদিও তার বেড়ে ওঠা সহজ ছিল না। এক সময় তিনি ঘরহীন হয়ে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে আশ্রয় নিতেন।
পরে দাদার আশ্রয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। দাদার অনুপ্রেরণায় সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন তিনি।
কিন্তু তার জীবন মোড় নেয় যখন, ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারী, নিউ অরলিন্সের একটি জনবহুল রাস্তায় এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। যে স্থানে জুরদান নিয়মিত গান করেন, সেখানেই ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক ঘটনা।
এই ঘটনা জুরদানের জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। তিনি অনুভব করেন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। এরপরই তিনি এজিটি-তে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মঞ্চে তিনি ‘দ্য স্ক্রিপ্ট’-এর ‘ব্রেকইভেন (ফ্যালিং টু পিসেস)’ গানটি পরিবেশন করেন। তার গান শুনে বিচারক এবং দর্শক সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বিচারকদের মধ্যে সোফিয়া জুরদানকে ‘রকস্টার’ আখ্যা দেন। মেল বি’র মতে, তিনি যেন গানটি নতুন করে শুনছেন। সাইমন কাউয়েল জুরদানের কণ্ঠ এবং দর্শকদের সঙ্গে তার সংযোগের প্রশংসা করেন।
সবশেষে, বিচারক হাউই ম্যান্ডেল গোল্ডেন বাটন টিপে জুরদানকে সরাসরি ফাইনালের জন্য নির্বাচিত করেন। আবেগ ধরে রাখতে না পেরে জুরদান হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। তার চোখে জল, আর মঞ্চে সোনালী কনফেত্তি উড়তে থাকে।
অনুষ্ঠানটিতে আরও একজন প্রতিযোগী, ব্রাজিলের লাইট ওয়্যার নামক একটি দলও বিচারকদের মন জয় করে গোল্ডেন বাটন লাভ করে। সাইমন কাউয়েল তাদের পরিবেশনাকে ‘জাদুকরী’ বলে অভিহিত করেন।
তথ্য সূত্র: পিপল