আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার সের্হিও আগুয়েরো, যিনি একসময় মাঠ কাঁপিয়েছেন, বাবার কঠোর শাসনের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কুন বাই আগুয়েরো’ নামক তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে তাঁর ফুটবল জীবনের নানা দিক।
যেখানে উঠে এসেছে তাঁর সাফল্যের পেছনের গল্প, বাবার কঠিন শাসন এবং কঠোর পরিশ্রমের কথা।
আগুয়েরোর বাবা লিওনেল দেল কাস্টিলো চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে আরও ভালো খেলুক। কিন্তু ছেলের ভালো খেলাটা যেন তাঁর চোখে পড়তই না।
সব সময়ই যেন আরও ভালো করার তাগিদ দিতেন। আগুয়েরো বলেন, “বাবা চাইতেন আমি যেন কখনোই আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় না উঠি, কোনো অহংকার যেন আমার মধ্যে বাসা না বাঁধে।”
তাঁর মতে, বাবার এই কঠোরতা তাঁকে আরও ভালো খেলোয়াড় হতে সাহায্য করেছে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল খেলা শুরু করেন আগুয়েরো। এরপর তিনি ৭৮৬টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪২৭টি গোল করেন।
মাঠের খেলায় তিনি ছিলেন দারুণ ক্ষিপ্র এবং প্রতিপক্ষের জন্য এক মূর্তিমান আতঙ্ক। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে ছিল বাবার কঠোর পরিশ্রম।
আগুয়েরোর শৈশব কেটেছে আর্জেন্টিনার কুইলমসের লস ইউকালিপটাস-এ। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা আগুয়েরোর জীবনে ফুটবল ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র অবলম্বন।
বাবা লিওনেল ছেলেকে নিয়ে বুয়েনস আইরেসের বিভিন্ন ক্লাবে যেতেন, যেখানে তিনি দিনে চার-পাঁচটা করে ম্যাচ খেলতেন। বাবার আর্থিক অনটন দূর করতেও ফুটবল ছিল তাঁর প্রধান সহায়।
আগুয়েরোর ফুটবল জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা। সেখানে তিনি এক দশকের বেশি সময় খেলেছেন এবং ক্লাবকে অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন।
২০১২ সালে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে তাঁর করা গোলটি এখনো ফুটবল ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তাঁর এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ, ম্যানচেস্টার সিটির বাইরে তাঁর একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলার স্বপ্ন অপূর্ণ থাকলেও, আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পূরণ হয়েছে তাঁর।
কাতার বিশ্বকাপে, আর্জেন্টিনার জয়ের পর, আগুয়েরোকে মেসির কাঁধে চড়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়, যা ছিল এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য।
আগুয়েরোর ভাষ্যে, বাবার শাসন তাঁকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাঁর মতে, বাবার এই কঠোরতা না থাকলে হয়তো তিনি অন্য পথে পা বাড়াতেন।
মাদকাসক্তিতে ভরা তাঁর এলাকার জীবন থেকে বেরিয়ে আসার পেছনে বাবার অবদান অনস্বীকার্য।
বর্তমানে, আগুয়েরো খেলা থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে খেলা ছাড়ার পরও তিনি বিভিন্ন ব্যবসা এবং স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে তাঁর পরিচিতি ধরে রেখেছেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর জীবনী নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘কুন বাই আগুয়েরো’ মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আবারও আলোচনায় এসেছেন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান