আতঙ্কের চেয়েও পুরোনো! মৃত সাগর পাণ্ডুলিপির বয়স নিয়ে নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য!

প্রাচীন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল, ‘ডেড সি স্ক্রোলস’ বা মৃত সাগর পাণ্ডুলিপিগুলির বয়স নির্ধারণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)। সম্প্রতি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের মাধ্যমে পাণ্ডুলিপিগুলির সময়কাল সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।

এই আবিষ্কার প্রত্নতত্ত্ব এবং ইতিহাসের গবেষণায় এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

১৯৪৭ সালে, জর্ডানের কাছে ডেড সি বা মৃত সাগরের কাছাকাছি একটি গুহায় প্রথম এই পাণ্ডুলিপিগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর আরও অনেকগুলো গুহা থেকে এই ধরনের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

বাইবেলের প্রাচীনতম কিছু অংশসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই স্ক্রোলগুলিতে লিপিবদ্ধ করা ছিল। তাই, এগুলি প্রাচীন ইহুদি ও খ্রিস্টীয় ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।

ঐতিহ্যগতভাবে, এই স্ক্রোলগুলির বয়স নির্ধারণের জন্য ‘কার্বন ডেটিং’ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হতো। তবে, এই পদ্ধতিতে নথির একটি অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়াও, স্ক্রোলগুলির উপর ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক উপাদান, যেমন কাস্টর অয়েল, পরীক্ষার ফলকে প্রভাবিত করতে পারতো। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা নতুন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।

তাঁরা প্রথমে রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে কিছু স্ক্রোলের বয়স নির্ধারণ করেন। এরপর, সেই ডেটা ব্যবহার করে ‘এনোক’ নামে একটি AI প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়।

এনোক নামের এই AI প্রোগ্রামটি স্ক্রোলগুলির হাতের লেখার ধরন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে সেগুলির বয়স সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এআই-এর অনুমান করা বয়স অনেক ক্ষেত্রে নির্ভুল ছিল।

কিছু ক্ষেত্রে, এটি কার্বন ডেটিংয়ের চেয়েও বেশি সঠিক ফলাফল দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর ফলে স্ক্রোলগুলির প্রকৃত বয়স সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই অনুসন্ধানে কিছু স্ক্রোলের বয়স আরো প্রায় ১০০ বছর পুরনো হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ‘বুক অফ ড্যানিয়েল’-এর একটি অংশের পাণ্ডুলিপি আগে দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্ব শতকের বলে মনে করা হতো, কিন্তু নতুন বিশ্লেষণে এটি লেখকের সময়কালের কাছাকাছি সময়ে লেখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একই রকমভাবে, ‘বুক অফ ইক্লিসিয়াস্টেস’-এর একটি পাণ্ডুলিপি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর, যা আগেকার ধারণার চেয়ে অনেক পুরোনো।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে পুরাতন পাণ্ডুলিপিগুলির বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে কার্বন ডেটিংয়ের একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

যেহেতু এআই-এর মাধ্যমে স্ক্রোলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সম্ভব, তাই এটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।

এই আবিষ্কার ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্বের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে এবং প্রাচীন নথিগুলির আরও গভীর অনুসন্ধানের পথ খুলে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *