এআই-এর জাদু: ক্যান্ডি ক্রাশ খেলোয়াড়দের নতুন চমক!

মিষ্টি স্বাদের খেলা ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা (Candy Crush Saga)-এর লক্ষ লক্ষ খেলোয়াড়দের জন্য এক দারুণ খবর! জনপ্রিয় এই মোবাইল গেমটি তাদের আকর্ষণীয় লেভেল (level) ডিজাইন (design) এবং পুরাতন লেভেলগুলিকে আরও মজাদার করে তোলার জন্য ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) বা এআই (AI)।

সম্প্রতি, এই গেম প্রস্তুতকারক সংস্থা কিং (King) ঘোষণা করেছে যে, তারা এআই-এর সহায়তায় গেমের নতুন সংস্করণ তৈরি করছে, যা খেলোয়াড়দের জন্য গেমিং অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করবে।

আসলে, ক্যান্ডি ক্রাশ সাগার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলি এখন এআই-এর সাহায্য নিচ্ছে গেমের জটিল ধাঁধাগুলো তৈরি করতে। বর্তমানে গেমটিতে ১৮,৭০০-এর বেশি লেভেল রয়েছে, এবং এগুলোর প্রত্যেকটিই খেলোয়াড়দের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার কাজটি সহজ করতে এআই-এর জুড়ি নেই।

এর ফলে, ডেভেলপারদের (developer) নতুন নতুন লেভেল তৈরি করতে এবং পুরাতন লেভেলগুলিকে উন্নত করতে সুবিধা হচ্ছে। গেমারদের (gamer) কাছে গেমটিকে আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলতেই এই পদক্ষেপ।

গেমটির জেনারেল ম্যানেজার (general manager) টড গ্রিন (Todd Green) জানিয়েছেন, এআই ব্যবহারের ফলে ডেভেলপারদের সময় বাঁচে, যা তাদের নতুন ধাঁধা তৈরি করতে সাহায্য করে। তাদের মতে, এআই ছাড়া এতগুলো লেভেল তৈরি করা বা সেগুলোর মানোন্নয়ন করা প্রায় অসম্ভব।

ভিডিও গেম (video game) জগতে এআই ব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন জনের ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এআই গেম তৈরিতে সহায়ক একটি হাতিয়ার, যা ডেভেলপার ও শিল্পীদের বড় প্রকল্পগুলোতে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, এআই আরও ইন্টারেক্টিভ (interactive) চরিত্র তৈরি করতে পারে, যা গেমের জগৎকে আরও সমৃদ্ধ করে।

আবার অনেকে এআই-এর ব্যবহারকে তাদের জীবিকার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন। তবে ক্যান্ডি ক্রাশ কর্তৃপক্ষের মতে, তারা সরাসরি খেলোয়াড়দের জন্য এআই-চালিত কোনো ডিজাইন (design) তৈরি করছে না। বরং, বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে কর্মীদের কাজ আরও দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে (USA) ২০২৩ সালে ভিডিও গেমের বাজার ছিল প্রায় ৪৯.৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৫1.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মোবাইল গেমের (mobile game) অবদান প্রায় অর্ধেক।

বিনোদন সফটওয়্যার এসোসিয়েশন (Entertainment Software Association) -এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল প্ল্যাটফর্মটি (platform) ৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে গেমিংয়ের প্রধান মাধ্যম।

২০১২ সালে ফেসবুকে (Facebook) যাত্রা শুরু করা ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা নিয়মিত আপডেট (update) হয়। ২০১৬ সালে অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড (Activision Blizzard) ৫.৯ বিলিয়ন ডলারে কিং-কে কিনে নেয়।

বর্তমানে গেমটির ৩০০তম ক্লায়েন্ট সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্ডি ক্রাশের মতো জনপ্রিয় গেম, যা কোটি কোটি ব্যবহারকারীর কাছে পরিচিত, সেখানে এআই ব্যবহার করা খুবই যৌক্তিক। কারণ, খেলোয়াড়দের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন কন্টেন্ট (content) সরবরাহ করতে হয়, যা এআই-এর মাধ্যমে সহজ হয়। এর ফলে, খেলোয়াড়রা আরও বেশি লেভেল খেলতে পারে।

কিং এআই ব্যবহার করে প্রধানত দুটি দিকে: নতুন লেভেল তৈরি এবং পুরাতন লেভেলগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। বিশেষ করে, যারা অনেক দিন ধরে গেমটি খেলছেন, তাদের জন্য নতুন ধাঁধাগুলো আকর্ষণীয় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

টড গ্রিন আরও জানান, তারা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে নিয়মিত ফিডব্যাক (feedback) পান এবং লেভেলগুলোর প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারেন, খেলোয়াড়রা কোনো লেভেলে আটকে যাচ্ছে কিনা, অথবা তারা গেমটি ভালোভাবে উপভোগ করছে কিনা।

লেভেলের মান যাচাইয়ের জন্য তারা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেন, যেমন – কতবার একজন খেলোয়াড় একটি লেভেল শেষ করতে পারছে (pass rate), অথবা কতবার একটি বোর্ডের ক্যান্ডিগুলো নতুন করে সাজানো হচ্ছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশেও (Bangladesh) মোবাইল গেমিংয়ের (mobile gaming) জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাই, ক্যান্ডি ক্রাশের মতো গেমগুলোতে এআই-এর ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *