বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে, যা আমাদের জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর পাশাপাশি, শিশুদের জন্য অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
সম্প্রতি, ‘কমন সেন্স মিডিয়া’ নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে শিশুদের জন্য AI ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কিছু ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েদের এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা উচিত নয়।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে AI নির্ভর ‘কম্প্যানিয়ন অ্যাপস’-এর (Companion apps) কথা বলা হয়েছে। এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তারা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথা বলতে পারে এবং নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন চরিত্র তৈরি করতে পারে।
ChatGPT-এর মতো সাধারণ AI চ্যাটবটের থেকে এই অ্যাপগুলো কিছুটা আলাদা। কারণ, এখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের মতো করে চ্যাটবট তৈরি করতে পারে এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, Nomi নামক একটি অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ‘আনফিল্টারড চ্যাট’ করার সুযোগ দেয়, যেখানে AI পার্টনারের সঙ্গে ব্যবহারকারীরা তাদের মনের কথা বলতে পারে।
কমন সেন্স মিডিয়ার পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ধরনের অ্যাপগুলোতে মাঝে মাঝে এমন সব মন্তব্য পাওয়া যায় যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে যৌনতামূলক আলোচনা, বিভিন্ন কুসংস্কার সম্পর্কিত মন্তব্য এবং এমন সব পরামর্শ যা অনুসরণ করলে ব্যবহারকারীর জীবনহানির সম্ভবনা থাকে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের অ্যাপগুলোতে শিশুদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা উচিত।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শিশুরা এই ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে ক্ষতিকর মানসিকতার শিকার হতে পারে এবং AI চরিত্রগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকী, তারা বয়স-উপযুক্ত নয় এমন কনটেন্ট-এর সম্মুখীন হতে পারে।
এই বিষয়ে বিভিন্ন AI কোম্পানি তাদের প্ল্যাটফর্ম নিরাপদ করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। Character.AI জানিয়েছে, তারা শিশুদের সুরক্ষার জন্য নতুন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, আত্ম-ক্ষতি বা আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করার সময় ব্যবহারকারীদের জন্য একটি হেল্পলাইন নম্বর দেখাচ্ছে তারা। এছাড়াও, শিশুদের অনলাইন কার্যকলাপের উপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের সাপ্তাহিক ইমেইল পাঠানোর ব্যবস্থাও চালু করেছে।
তবে, গবেষকরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর আরও বেশি কিছু করা উচিত, যাতে শিশুরা এইসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে না পারে এবং অনুপযুক্ত কন্টেন্ট থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারে।
ইতিমধ্যে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন মহল থেকে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন