আতঙ্ক! এআই বন্ধুর পাল্লায় কিশোর-কিশোরীরা, বাড়ছে বিপদ?

**তরুণদের মাঝে বাড়ছে ‘এআই বন্ধু’র জনপ্রিয়তা, বাড়ছে উদ্বেগের কারণ**

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রায় এনেছে নানা পরিবর্তন। এর মধ্যে অন্যতম হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) ব্যবহার।

স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে এআই নির্ভর বিভিন্ন অ্যাপ ও সফটওয়্যারের ব্যবহার। সম্প্রতি, একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, কিশোর-কিশোরীরা তাদের বন্ধুত্বের জন্য ঝুঁকছে এই ‘এআই বন্ধু’র দিকে।

কিন্তু, এই প্রবণতা কতটা নিরাপদ? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সম্প্রতি ‘কমন সেন্স মিডিয়া’ নামক একটি সংস্থার করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৭২ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে এআই নির্ভর ‘বন্ধু’ ব্যবহার করেছে।

এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিয়মিতভাবে এই ধরনের এআই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এক-তৃতীয়াংশ কিশোর-কিশোরী তাদের সামাজিক সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বের জন্য এই এআই-এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৩১ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মতে, এআই-এর সঙ্গে তাদের কথোপকথন মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতার মতোই আনন্দদায়ক, অথবা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি।

এমনকি, ৩৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ, বিশেষ করে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা না করে, এআই-এর সঙ্গেই আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা তরুণদের সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ।

কারণ, এআই প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত মানুষের মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক ভাষা, আবেগ, এবং বিভিন্ন সূক্ষ্ম বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা এআই-এর পক্ষে বোঝা বা অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

এছাড়াও, এআই সবসময় ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী কথা বলে, যা বাস্তব জীবনে বিদ্যমান সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে তরুণদের প্রস্তুত করে না।

বাস্তব জগতে মতবিরোধ, সমালোচনা, অথবা কঠিন পরিস্থিতিগুলো কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়, তা শেখার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়।

গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।

তা হলো, প্রায় ২৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এআই-এর সঙ্গে শেয়ার করে।

অনেক সময় তারা হয়তো বুঝতে পারে না যে, তাদের এই ব্যক্তিগত তথ্যগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে চলে যাচ্ছে, যা তাদের গোপনীয়তার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন তাদের সন্তানদের সঙ্গে এআই প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহার নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

সন্তানদের বোঝানো উচিত যে, এআই বন্ধুত্বের চেয়ে বাস্তব মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা অনেক বেশি জরুরি।

এছাড়াও, সন্তানদের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের পরিবর্তে, খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা, বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো বিষয়গুলোতে উৎসাহিত করতে হবে।

যদি কোনো কিশোর-কিশোরী এআই-এর প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ে, তবে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।

তারা যদি বন্ধুদের পরিবর্তে এআই-এর সঙ্গে বেশি সময় কাটায়, অথবা মন খারাপ হলে এআই-এর সাহায্য নেয়, তাহলে দ্রুত মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এই গবেষণা আমাদের সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করলেও, এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

তরুণ প্রজন্মের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করার জন্য, অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক এবং সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে এগিয়ে আসতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *