ডিজাইনারদের চোখে এআই: কীভাবে সবকিছু বদলে যাচ্ছে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ডিজাইন শিল্পও এর ব্যতিক্রম নয়। আসবাবপত্র, ফ্যাশন থেকে শুরু করে স্থাপত্য—সবকিছুতেই এআই-এর ছোঁয়া লেগেছে।

বিশ্বজুড়ে এই পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে, যেখানে ডিজাইন ভাবনা এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় এআই নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

ডিজাইনের ক্ষেত্রে এআই-এর প্রভাব নিয়ে তিনজন খ্যাতনামা ডিজাইনার তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাদের কাজ এবং উপলব্ধির মাধ্যমে, আমরা বুঝতে পারি কীভাবে এই প্রযুক্তি ডিজাইন শিল্পকে নতুন পথে চালিত করছে।

শিল্প-ডিজাইনার ফিলিপ স্টার্কের মতে, এআই একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা ডিজাইন প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এবং কার্যকরী করে তোলে।

২০১৯ সালে, তিনি ইতালীয় কোম্পানি কার্তেলের সঙ্গে মিলে এআই-এর সহায়তায় তৈরি করা প্রথম গণ-উৎপাদিত আসবাবপত্র “এআই চেয়ার” উন্মোচন করেন। স্টার্ক মনে করেন, এআই এখনো মানুষের মতো সৃষ্টিশীলতা দিতে পারে না, তবে এটি সময় বাঁচাতে এবং তথ্যের বিশাল জোগান দিতে সক্ষম।

ফ্যাশন ডিজাইনার নরমা কামালি তার দীর্ঘ ৫৭ বছরের ফ্যাশন আর্কাইভকে কাজে লাগিয়ে এআই ব্যবহার করছেন। তিনি তার পুরনো ডিজাইনগুলোকে নতুন রূপে ফিরিয়ে আনতে এআই-এর সাহায্য নিচ্ছেন।

কামালি একটি এআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তার আর্কাইভের ডিজাইনগুলোকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সাজিয়েছেন। এর ফলে, তিনি সহজেই তার পুরোনো ডিজাইন থেকে নতুন আইডিয়া তৈরি করতে পারছেন।

উদাহরণস্বরূপ, তিনি তার একটি জনপ্রিয় পোশাকের নতুন সংস্করণ তৈরি করতে এআই ব্যবহার করেছেন, যা ডিজাইনটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কামালি মনে করেন, এআই নতুন কাজ তৈরি করবে এবং জীবনযাত্রার নতুন পথ খুলে দেবে।

স্থাপত্য ডিজাইনার টিম ফু মনে করেন, এআই স্থাপত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, যেমন—নকশা তৈরি, স্থানের বিন্যাস এবং নির্মাণ সামগ্রীর পরিকল্পনা ইত্যাদি।

তার কোম্পানি, টিম ফু স্টুডিও, স্থাপত্য এবং স্থানিক অপটিমাইজেশনের জন্য এআই সরঞ্জাম তৈরি করেছে। তারা একটি প্রকল্পের জন্য এআই ব্যবহার করে স্লোভেনিয়ার লেক ব্লেডে একটি রিসোর্টের ডিজাইন করেছেন।

এই প্রকল্পে, এআই বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করেছে, যা স্থানীয় স্থাপত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ডিজাইনারদের মতে, এআই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা ডিজাইন শিল্পে পরিবর্তন আনছে। তবে, এর ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

এআই-এর মাধ্যমে ডিজাইন প্রক্রিয়া সহজ হলেও, মানুষের সৃজনশীলতা এবং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বর্তমানে, বাংলাদেশেও ডিজাইন শিল্পে এআই-এর সম্ভাবনা বাড়ছে। পোশাক শিল্প, ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং স্থাপত্যের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে।

স্থানীয় ডিজাইনার এবং নির্মাতারা যদি এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হন, তবে তারা তাদের কাজকে আরও উন্নত করতে পারবেন এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে পারবেন।

ভবিষ্যতে, এআই-এর আরও উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশের ডিজাইন শিল্প বিশ্ব দরবারে আরও পরিচিতি লাভ করবে, এমনটাই আশা করা যায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *